চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)-এর কিছু কিছু উদ্যোগ চমকে দেওয়ার মতো। তেমন একটি উদ্যোগ থানায় বসে যে কেউ বই পড়তে পারার সুযোগ। ১ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় ‘থানায় বসে যে কেউ পড়তে পারবেন বই / সিএমপির উদ্যোগ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো। ভালো খাদ্যবস্তু পেট ভরে কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে। বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান। বই পাঠ মানব ভাবনাকে করে পরিশুদ্ধ ও ব্যক্তিত্বকে করে সুস্পষ্ট। বই পড়া বা পাঠাভ্যাসের এই প্রচলন ছড়িয়ে দিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) অনন্য উদ্যোগ নিয়ে প্রতিটি থানায় লাইব্রেরি স্থাপন করেছেন। সিএমপিসূত্র জানায়, থানায় আগত সেবাপ্রার্থীরা তাদের অপেক্ষমাণ সময়ে হাতে তুলে দেখেন এসব বই। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, ইতিহাস কিংবা দর্শন, দেশি বিদেশি বিভিন্ন লেখকের বইয়ের সম্ভারে সাজানো এসব লাইব্রেরি। বসে পড়ার জন্য এসব লাইব্রেরিতে রয়েছে সীমিত পরিসরে চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা। থানায় বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা ব্যক্তিরাই নন, এসব বই পড়ার সুযোগ রয়েছে এলাকাবাসীরও। গ্রন্থাগারে বসে বই পড়ার পাশাপাশি কেউ চাইলে বাড়িতে নিয়েও এসব বই পড়তে পারবেন।
সিএমপিসূত্র আরো জানায়, সময়ের সাথে এসব লাইব্রেরিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে বইয়ের পরিমাণ। কয়েক মাস পর পরই কেনা হয় নতুন নতুন বই। অন্যান্য বইয়ের সাথে রাখা হচ্ছে আইন সংশ্লিষ্ট বইও। সূত্র আরো জানায়, থানার লাইব্রেরির এসব বই থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মন মানসিকতায় ভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনার খোরাক জোগাবে। পুলিশিং এর কঠোর বলয় থেকে সাময়িক সময়ের জন্য পাঠককে এনে দিবে মুক্তি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এই উদ্যোগ ক্ষুদ্র মনে হলেও এর বিস্তার অত্যধিক। এর গুরুত্ব অপরিসীম। বলা অনাবশ্যক যে, মানুষের আলোকিত জীবনের উপকরণ হচ্ছে বই। জগতে শিক্ষার আলো, নীতি-আদর্শ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সভ্যতা, সাহিত্য-সংস্কৃতি-সবই জ্ঞানের প্রতীক বইয়ের মধ্যে নিহিত। মানবজীবন নিতান্তই একঘেয়ে দুঃখ-কষ্টে ভরা, কিন্তু মানুষ বই পড়তে বসলেই সেসব ভুলে যায়। পৃথিবীতে বিনোদনের কত কিছুই না আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু বই পড়ার নির্মল আনন্দের কাছে সেগুলো সমতুল্য হতে পারেনি। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক কোনো মজাদার বইয়ের বিষয়বস্তু বা ঘটনা মানুষ সহজে ভুলে যায় না। তাই জীবনের অবসর সময়গুলো বইয়ের নেশায় ডুবে থাকা দরকার।
এর আগে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী এবং একাত্তরের প্রতিরোধ যোদ্ধা পুলিশের স্মৃতি বিজড়িত দুটি ভবন নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’।এটিকে জাতির ইতিহাস সংরক্ষণের অনন্য প্রয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই কনসেপ্টটি সবার অন্তরে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘একটা কথা আপনাদের ভুললে চলবে না। আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন- জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে, এর লোক বাংলাদেশের গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। আপনাদের নিকট বাংলাদেশের মানুষ এখন একটি জিনিস চায়। তারা যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তারা আশা করে, চোর, বদমাইশ, গুণ্ডা, দুর্নীতিবাজ যেন তাদের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। আপনাদের কর্তব্য অনেক।’
বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের সক্ষমতার ভেতরে থেকে যথাযথ চেষ্টা করে যাচ্ছেন জনগণের বন্ধু হয়ে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে। ‘শুধু পুলিশ সদস্য হিসেবে নয় একজন মানুষ হিসেবেও মানবিক গুণাবলির সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য আজ জনগণের বন্ধু হিসেবে কাজ করছেন ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অনন্য ভূমিকা রাখছেন।’
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই অস্ত্রাগারের ইতিহাস জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে জাদুঘর নির্মাণের জন্য সিএমপি কমিশনার প্রশংসার দাবিদার। একই সঙ্গে থানায় বসে যে কেউ বই পড়তে পারার সুযোগ এবং জ্ঞানচর্চায় ভূমিকা পালন নিশ্চয় আনন্দের বিষয়। আমি এমন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সিএমপিকে জানাই সাধুবাদ।