চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেশে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ যারা গণহত্যা ও নির্যাতন অংশগ্রহণ করেছেন তাদের কঠোর শাস্তি ও বিচার চাইলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চব্বিশের জুলাই–আগস্টে ছাত্র জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে বিচার চেয়ে তিনি দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দি শেষ করেন। খবর বাসসের।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এ দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে নিজের নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরার পাশাপাশি নাহিদ ইসলাম বলেন, তারা গত বছরের ৪ আগস্ট শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। সেদিন ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সরকার কারফিউ ঘোষণা করে। দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। তারা জানতে পারেন, ৬ আগস্ট সরকার মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকার মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবে, তাদের হত্যা ও গুম করা হতে পারে। তাই তারা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন।
মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে মাহফুজ আলম (বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা) অন্যান্য ছাত্রসংগঠনসহ নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করছিলেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তারা নতুন সরকার গঠনের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন। ৪ আগস্ট তাকে নতুন সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেন।
গত বছরের ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম জবানবন্দিতে বলেন, ওইদিন তারা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করেন। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী এক পর্যায়ে রাস্তা ছেড়ে দিলে তারা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তারা শুনতে পান, ঢাকার প্রবেশ মুখ যেমন যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করছে। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে তারা গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে সংবাদ পান, গণ–বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে গেছেন। আরও শুনতে পান, ছাত্র–জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে। সেদিন সন্ধ্যায় তারা সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন এবং সব বন্দির মুক্তির দাবি জানান। তারা কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন মেনে নেবেন না বলেও ঘোষণা দেন।
জবানবন্দির পর নাহিদ ইসলামকে জেরা করেন এই মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। জেরা শেষে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী জেরার জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। অপর প্রসিকিউটররা শুনানিকালে উপস্থিত ছিলেন। মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।