চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় যুবলীগের সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রেলস্টেশনে একটি খাবার দোকান দখলে নেওয়া নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয় বলে জানা যায়। গতকাল সোমবার ভোর ৪টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। এসময় মসজিদের মাইকে গুজব রটিয়ে স্থানীয়দের ডেকে চবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এতে চবির ৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের একজন গুরুতর অবস্থায় বর্তমানে নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসময় রেল গেট এলাকায় অবস্থিত অভিযুক্ত হানিফের খামার থেকে কিছু গরু ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে এদিন বিকেলে ভবিষ্যতে এ ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন, গ্রামবাসী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। একইদিন রাত নয়টার দিকে অনুষ্ঠিত সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা গরুগুলো হানিফের পিতার নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভোর ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় নির্মাণাধীন আপ্যায়ন নামক একটি রেস্টুরেন্টে দখল করার উদ্দেশ্যে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের অনুসারীরা। এসময় তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলগেট এলাকায় যায়। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যুবলীগের ওই নেতার একটি দোকান ভাঙচুর করে।
পরে যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়েছে উল্লেখ করে গুজব রটিয়ে দেয়। এসময় মসজিদের মাইকে লোকজনকে চবির শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করার জন্য বলা হয়। শিক্ষার্থীরা রেলগেট অবস্থান শেষ করে ফিরে আসার সময় স্থানীয়রা পেছন থেকে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর সকাল আটটার দিকে পুনরায় শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে মিছিল সহকারে রেল গেট এলাকায় যায়। রেল গেট এলাকায় অবস্থিত অভিযুক্ত হানিফের খামার থেকে কিছু গরু ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ খালেদ জানান, ক্যাম্পাসে যুবলীগের সন্ত্রাসীরা বোমাবাজি করছে শুনে সকালেই আমরা জিরো পয়েন্টে আসি। পুলিশকে খবর দেয়া হলেও রেলগেটে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নেওয়ায় তারা আসতে পারছে না বলে শোনা যায়। পরে আমরা শিক্ষার্থীরা প্রক্টর স্যারসহ রেলগেট এলাকায় যাই এবং অবস্থান নেই। এসময় যুবলীগের ক্যাডাররা আমাদের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে আমরা ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, পুলিশ আমাদের ন্যূনতম সহযোগিতা করেনি। এতো বিশাল ঘটনা, অথচ ওসি পুলিশ পাঠিয়েছে ৩ জন। ওই ৩ জন আবার সন্ত্রাসীদের কারণে রেলগেট থেকে আসতে পারেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, স্থানীয় একজনের দোকানে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর চালালে ঘটনার সূত্রপাত হয়। রাত ৪ টায় এখানে প্রচুর ককটেল ফোটানো হয়। এর প্রেক্ষিতে সকালে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা গুজব রটিয়ে দেয় এলাকাবাসীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এরপর সকালে আমরাসহ শিক্ষার্থীরা রেলগেট এলাকায় যাই। পুরো বিষয়টি সমাধানের উদ্দেশ্যে সেখানে গ্রামবাসীর সাথে কথা হয়েছে। জানতে চাইলে সমন্বয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকা সহকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. কোরবান আলী বলেন, গ্রামবাসীদের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা গরুগুলো ফেরত দিয়েছি। গ্রামবাসীর সাথে আমরা সকলে একসাথে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত যুবলীগ নেতা হানিফ। রেলস্টেশনে রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে সবগুলো দোকানের ভাড়া নেয় হানিফ। হানিফের বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তার ছোটোভাই ছাত্রলীগ নেতা মো. ইকবাল পুরো ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় ডিসের লাইন এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবসা করে। অন্য কাউকে তারা এখানে ব্রডব্যান্ডের ব্যবসাও করতে দেয় না। নিম্নমানের ইন্টারনেট দিয়ে দীর্ঘদিন এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিম্নমানের ইন্টারনেটের বিষয়ে অভিযোগ জানালে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগও আছে ইকবালের বিরুদ্ধে। এর আগে গত ৫ আগস্ট রাতে রেলক্রসিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায় যুবলীগ নেতা হানিফ ও তার অনুসারীরা। সে সময় দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের গাড়িতেও হামলা করে তারা। তাদের হামলায় তখন ৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।