বিদেশি জার্নালে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি চবি শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছেন। তবে এদিন কোনো শুনানি না হওয়ায় আগামী ১৭ নভেম্বর শুনানির ধার্য তারিখ পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকছেন। গতকাল ১০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আসামির উপস্থিতিতে এই জামিন আবেদন করা হয়েছে বলে আজাদীকে জানান মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ২০১৬ সালে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ হত্যা মামলারও আসামি।
অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে আসামি জামিন আবেদন করেছিলেন। পরে উচ্চ আদালত আসামির ৬ সপ্তাহের জামিনের আদেশ দেন। একই সাথে আসামিকে আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হয়েছে। তবে মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনার জন্য এদিন কোনো জামিন শুনানি হয়নি। আদালত আগামী ১৭ নভেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন। সেই সময় পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকবেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিরা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি আনোয়ার হোসেন গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন।
বর্তমানে মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গতকাল আদালতের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ, বাদীপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত গ্লোবাল জার্নাল অব হিউম্যান সোশ্যাল সায়েন্স জার্নালে ‘ধর্মীয় রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি; একটি চলমান সংকট’ শীর্ষক শিরোনামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু মুসলিমের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে উল্লেখের অভিযোগ উঠে আনোয়ারের লেখায়। এছাড়া প্রবন্ধটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সাথে কোথাও বঙ্গবন্ধু শব্দটি উল্লেখ না থাকা, একেক জায়গায় একেক রকমের বানান, আওয়ামী লীগকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে উল্লেখ করারও অভিযোগ উঠে। ২০১৮ সালে ৬ মে ওই প্রবন্ধের সূত্র ধরে একটি গণমাধ্যমে ‘মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিতর্কিত চবি শিক্ষক আনোয়ারের গবেষণায় বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
২০১৮ সালের ১৭ মে মহানগর হাকিম আবুল সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে আসাদুজ্জামান তানভীর নামে ছাত্রলীগের এক কর্র্মী আনোয়ারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় আদালত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অভিযোগটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে নিতে পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশনা দেন। ওই বছরের ১ জুলাই (স্মারক নং-৪০৯৪) মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও দলটির প্রধানের নামে বিকৃত তথ্য ও মানহানিকর তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমোদনের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ২৪ জুলাই পাঁচলাইশ থানায় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এজাহার হিসেবে নেয়া হয়। এ সময় দণ্ডবিধি ১২৩ (ক)/১২৪ (ক)/১৭৭/৫০০/৫০১/৫০২ ধারায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।