চবি লেখকদের প্রথম সম্মেলন : সংগঠিত হবার নতুন অধ্যায়

সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী | বৃহস্পতিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ নগরীতে দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখক পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লেখকদের নিয়ে এই প্রথম কোন সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ষাট বছরের মধ্যে এটিই প্রথম চবির লেখকদের জড়ো করে দুই দিনব্যাপী অভূতপূর্ব এক মিলনমেলার আয়োজন, যখন ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে নিয়ে নানা কর্মসূচি পালিত হল।

২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে। এই সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী জমজমাট দৃষ্টিনন্দন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল চবি কর্তৃপক্ষ। ১৮ তারিখ প্রথমদিন নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউট চত্বরে এই সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনের পর নানারকম সাজসজ্জা, হাতিঘোড়া ও বাদ্যবাজনায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিআরবি মাঠে শেষ হয় এবং ঐদিন বিকালে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আলোচনা, সংবর্ধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা গান গেয়ে দর্শকদের মতোয়ারা করেছিলেন। ১৯ নভেম্বর দ্বিতীয় দিন সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মাঠে। এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান সুবর্ণজয়ন্তী বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পাহাড়ের সবুজ শ্যামলিমায় অপরূপশোভা ও নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বহু খ্যাতিমান লেখকের জন্ম দিয়েছে, যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি এবং সগৌরবে গৌরবান্বিত। চবি শিক্ষার্থীদের মাঝে দুইশতাধিকেরও অধিক লেখক রয়েছেন যারা তাঁদের প্রকাশিত বই ও লেখালেখির জন্য দেশেবিদেশে খ্যাতি অর্জন করে কীর্তিমান হয়ে আছেন। কিন্তু চবির অর্ধশতাব্দী অতিক্রম হলেও এই লেখকদের সংগঠিত করে একটি প্লাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

এই প্রথম এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর এবং বর্তমান চট্টগ্রাম বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিমকে সভাপতি করে চবি লেখক পরিষদ গঠিত হয় এবং এর পূর্ণাঙ্গ কাঠামোর রূপ দেয়া হয়। রচিত হয় পরিষদের গঠনতন্ত্র এবং এরই আলোকে ব্যাংক হিসাব খুলে তাতে টাকা আমানত রাখা হয়। এরমধ্যে পরিষদের কয়েকটা সভাও অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় চবি লেখকদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী একটি সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সম্মেলনের কাজ সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে কয়েকটি উপকমিটি গঠন করা হয়। তারই আলোকে ২১ ও ২২ নভেম্বর নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চবি লেখকদের প্রাণের আবেগ, উচ্ছ্বাস ও আনন্দের মহামিলনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

২১ নভেম্বর শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহহিয়া আখতার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সংগঠনের সভাপতি শিক্ষাবিদ ড. ওবায়দুল করিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চবির সাবেক প্রফেসর ড. এ এফ ইমাম আলি, প্রফেসর ড. হায়াত হোসেন, প্রফেসর ড. মোঃ আবুল কাসেম, প্রফেসর ড. এম এ গফুর, প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক বক্তব্য রাখবেন। পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় থাকবেন বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিকাল সাড়ে ৫ টায় ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যচর্চা’ বিষয়ে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রফেসর ড. নুরুল আমিন। সন্ধ্যা ৭ টায় থাকবে কবিতা পাঠ ও স্মৃতিচারণ। তবে ঐদিন সকালে লেখকদের মানসগঠন শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় থাকবেন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম, কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ওমর কায়সার ও সেলিম সোলায়মান। পরেরদিন ২২ নভেম্বর শনিবার অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকাল সাড়ে ৪ টায়। এতে কবিতা পাঠ ও স্মৃতিচারণ নিয়ে লেখকরা উপস্থিত থাকবেন। বিকাল সাড়ে ৫ টায় থাকবে কৃতী লেখক সংবর্ধনা। এতে অনুবাদে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক জি এইচ হাবিবকে সংবর্ধিত করা হবে। এরপর শুরু হবে সনদ বিতরণ এবং কবিতা পাঠ ও স্মৃতিচারণ। ইতোমধ্যে এই সম্মেলনকে ঘিরে চবি লেখকদের মাঝে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। প্রাণবন্ত উৎসবমুখর এই সম্মেলন লেখকদের মিলনমেলায় রূপ নেবে। উন্মোচিত হবে চবি লেখকদের এক নতুন অধ্যায় যা আগামীদিনের গৌরবময় ইতিহাসে সমুজ্জ্বল থাকবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক, ছড়াকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধনোলকের ফাঁকে
পরবর্তী নিবন্ধগ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ উইক ২০২৫