চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার ৫৯৭ জন গ্র্যাজুয়েট ঐতিহ্যের টুপি মাথায় এবং কালো গাউন গায়ে জড়িয়ে তাদের সার্টিফিকেট গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখবেন। সেই সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করবেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮ বছরের ইতিহাসে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ৪ বার। আর দীর্ঘ ৯ বছর পর এটি হচ্ছে ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে সাজ সাজ রব। চারিদিক নানারঙে সাজানো হচ্ছে। প্রকৃতিও সাড়া জাগিয়েছে সবুজের সমারোহে এবং নানান ফুলের সম্ভারে। আয়োজকদের কারো চোখে এখন ঘুম নেই। দিনরাত কাজ করছেন সমাবর্তনের এই আয়োজনকে সফল করতে। আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী জানান, সমাবর্তনের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। মাঠে প্যান্ডেলসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ। তাপদাহে অতি গরমরোধের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। বেলা দেড়টার দিকে সমাবর্তন শোভাযাত্রা শুরু হবে, তবে এতে গ্র্যাজুয়েটরা অংশ নিতে পারবেন না। বেলা ২ টা জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এতে সমাবর্তন বক্তব্য রাখবেন। সভাপতিত্ব করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। শিক্ষা উপদেষ্টা ও দুই উপ–উপাচার্য এতে বক্তব্য রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বিকাল ৪ টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হতে পারে। ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে সব শিক্ষার্থী চবি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন তাদের ২৩ হাজার শিক্ষার্থী এই সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন, ফলে এযাবৎকালের এটিই হবে সবচেয়ে বড় ও ইতিহাস সৃষ্টিকারী সমাবর্তন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। পরে ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং ২০১৬ সালে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এবার সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিয়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা পুরো ক্যাম্পাস নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় নিয়েছে। অনুষ্ঠানে কোন ব্যক্তি মোবাইল ফোন ছাড়া, পানির বোতল, ব্যাগ বা অন্যকোন বস্তু সঙ্গে নিতে পারবেন না। আইডি কার্ড, আমন্ত্রণ পত্র সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি ক্যাম্পাসে নেয়া যাবে না। ভিতরের দুটি রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সংরক্ষিত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অতিথিদের আসা যাওয়ার জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে শতাধিক বাস ছাড়বে। শার্টল ট্রেনও নিয়মিত চলবে সিডিউলমত।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি সহ ৫ টি স্পটে এলইডি স্ক্রিনে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হবে। নির্ধারিত সময়সূচিতে গ্র্যাজুয়েটদের তাদের গাউন, টুপি, প্রবেশকার্ড সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। প্রবেশকার্ড ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
অনুষ্ঠানে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের না আনতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সমাবর্তনে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুন্দর আয়োজনে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দ উৎসবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বিশাল ঐতিহাসিক পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হোক এটাই চবিয়ানদের প্রত্যাশা।