চবির সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আসামি সহস্রাধিক

চুরি হওয়া অস্ত্র ফেরাতে বিজ্ঞপ্তি, জিডি

চবি প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি মামলা ও একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। মামলায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ এবং আরো এক হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা ও জিডি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যা যা করা প্রয়োজন সবকিছুই করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করব দ্রুত ক্লাসপরীক্ষায় ফেরার জন্য।

মামলার বিষয়ে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাউসার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের মারামারির ঘটনায় একটা মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত মামলার কাজ চালিয়ে যাব। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ফেরাতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি জিডি করেছে প্রশাসন। অস্ত্র ফেরাতে আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে কয়েকটি ছাত্র সংগঠন। তারা বেশ কয়েকটি দাবিও উত্থাপন করেছে।

পরিবেশ এখনো থমথমে : গতকাল সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, জনজীবন স্বাভাবিক নয়। গেট সংলগ্ন বাজারের অধিকাংশ দোকানপাট ছিল বন্ধ। এলাকাবাসীর উপস্থিতিও ছিল নগণ্য। জোবরা গ্রামমুখী সড়ক ও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে টহল দিচ্ছে যৌথবাহিনী। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোতে কোনো ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি। তবে অফিসিয়াল কার্যক্রম চলমান ছিল। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ছিল কম। ক্যাম্পাসে গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি ছিল।

চুরি হওয়া অস্ত্র ফেরাতে আল্টিমেটাম : চবির বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে জব্দ করা দেশীয় অস্ত্র দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরে সংরক্ষিত ছিল। ৩১ আগস্ট সংঘর্ষের সময় ওই দপ্তর থেকে অস্ত্রগুলো চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, অস্ত্রগুলো কারো কাছে থাকলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চবি নিরাপত্তা দপ্তরে জমা দিতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী প্রক্টর বজলুর রহমান বলেন, জোবরা গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীরা কয়েকবার নিরাপত্তা দপ্তরে আসে অস্ত্র নিতে। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে সেই সুযোগ দেয়নি। একটা পর্যায়ে আরো বেশি শিক্ষার্থী আসে। তারা আমাদের নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মীদের বাধা না মেনে অস্ত্রাগারের তালা ভেঙে অস্ত্র নিয়ে যায়। অস্ত্রাগারে দা, রামদা, ছুরি, স্টাম্পসহ প্রায় ১৫০টি দেশীয় অস্ত্র ছিল। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা প্রায় ১৩০টি অস্ত্র নিয়ে যায়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা অস্ত্রগুলো জমা দিয়ে যাচ্ছে।

চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র লুটের ঘটনায় হাটহাজারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। সেখানে অজ্ঞাত পরিচয় ৮০০১০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাদী হিসেবে রয়েছেন নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান আব্দুর রহিম।

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি : সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে উপাচার্য ও প্রধান প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট চবি শাখা। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ঝুপড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটি। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চবি শাখার সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া। তিনি বলেন, ৩১ আগস্ট রাতে নারী শিক্ষার্থীর ওপর হামলার বিচার চাইতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর প্রচার সম্পাদক মোশরেফুল হক রাকিবসহ শিক্ষার্থীরা বারবার প্রক্টরিয়াল বডিকে কল দিলেও তারা সাড়া দেননি। প্রক্টর দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো সুস্থ পরিবেশে শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা ও সমস্ত ব্যয়ভার প্রশাসনকে গ্রহণ করতে হবে। জোবরার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে অতি দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। অতি দ্রুত ক্যাম্পাসের ভেতর ইকারের বৃদ্ধি এবং ক্যাম্পাস থেকে এক নং ও দুই নং গেট পর্যন্ত চক্রাকার বাস চালু করা। স্থানীয়দের থেকে শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে শতভাগ আবাসনের রোডম্যাপ ও আবাসন ভাতা চালু করা। ১ নং ও ২ নং গেট এবং ১ নং রেলক্রসিং ও ২ নং রেলক্রসিংয়ে জোরালো নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমা চেয়ে উপাচার্য ও প্রধান প্রক্টরের পদত্যাগ।

ছাত্রদল ও অন্যান্য সংগঠনের বিক্ষোভ : শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চবি প্রশাসন ব্যর্থ দাবি করে চবি ছাত্রদল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। একইসাথে উপাচার্য এবং প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিসহ আরো চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সংগঠন। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকা ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচিতে ছাত্রদল চবি শাখার সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, জুলাই পরবর্তী প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কোনো আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। আবাসন নিশ্চিত করতে পারেনি। নিরাপদ খাবার নেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। আমরা এই ব্যর্থ প্রশাসনের পদত্যাগের দাবিতে এখানে অবস্থান নিয়েছি।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ বলেন, আমরা যখন সংঘর্ষের মধ্যে ছিলাম আর্মি এসেছে তার তিন থেকে চার ঘণ্টা পরে। এতগুলো শিক্ষার্থী যে আহত হলো এই দায় অবশ্যই প্রশাসনকে নিতে হবে। প্রশাসন আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি।

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জসদ জাকির বলেন, পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আমরা জিরো পয়েন্টে অবস্থান করি। আমাদের দাবির মধ্যে আছে, প্রশাসন থেকে আহত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার সাথে সুচিকিৎসা দিতে হবে। এক নম্বর গেটে ক্রসিং এবং দুই নম্বর গেট সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে। নারী শিক্ষার্থীরা যে হুমকির মুখে পড়ছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দায় নিতে না পারে তাহলে তাদের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০টি নতুন হল, আধুনিক হাসপাতাল ও মডেল থানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধঅধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ফিরল সুপ্রিম কোর্টের হাতে