চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রধান প্রকৌশলীকে মারধর ও নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে প্রায় চার ঘণ্টা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ রাখে প্রকৌশল দপ্তর। অভিযুক্তের বিচারের দাবিতে অবস্থান নেয় উপাচার্যের দপ্তরে। পরে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম ও তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে অবস্থান থেকে সরে আসে প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে ক্যাম্পাসে পানি, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ সচল হয়। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় ওই ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান চবির রেজিস্ট্রার। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, নিরাপত্তা দপ্তর ও কাটা পাহাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় রেজিস্ট্রার বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। চার ঘণ্টা পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। অনেক বিভাগে পরীক্ষা থাকায় কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ভোগান্তিতে কাটাতে হয়েছে চার ঘণ্টা। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাজু মুন্সি শাখা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বগিভিত্তিক সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা। তার বিরুদ্ধে আগেও এক শিক্ষককে মারধরের হুমকি এবং হলের বারান্দায় দেশীয় অস্ত্র রাখার অভিযোগ ছিল। এছাড়া সিআরবিতে ডাবল খুনের মামলার আসামি রাজু মুন্সী।
প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, সকাল ১০টায় কাটাপাহাড়ে, সাড়ে ১০টায় রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে আমার ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ নেতা রাজু মুন্সী। সে বারবার এরকম আচরণ করছে। প্রকৌশল দপ্তরের অফিসে গিয়ে মাস্তানি করে। আমরা এর বিচার চাই। আগামী ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হলে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে আবারও আন্দোলনে নামবে প্রকৌশল দপ্তর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) শেখ আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাজু মুন্সী সকালে আমার অফিসে এসে প্রহরীকে বলে গেছে, আমি যেন তার জন্য টাকা রেডি রাখি। আমাকে বলে, আমি এখনো এখানে কেন আছি? একপর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি প্রশাসনিক ভবনে গেলে সে সেখানেও আমাকে কয়েকবার ধাক্কা দেয়। বিষয়টি আমি উপাচার্যকে জানিয়েছি। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়ে সোমবার বিকালে আমি থাকায় গিয়েছি। রাজু মুন্সীকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাত দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি রশীদুল হায়দার জাবেদ বলেন, কাটা পাহাড় এলাকায় রাজু মুন্সী নামের এক ছাত্রলীগ নেতা প্রধান প্রকৌশলী ও নিরাপত্তা প্রধানকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসন বরাবর বিচার চেয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সী বলেন, তারা দুজন (প্রকৌশলী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা) বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত। আমি প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমি প্রতিবাদ জানানোয় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমার প্রতিবাদের ভাষা একটু বাজে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরিদুল আলম বলেন, গুটিকয়েক নামধারী অপরাজনীতি করা ছাত্রের কারণে আমরা বিতর্কিত হতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করবে। মামলার জন্য কমপ্লেইন করা হয়েছে। ওসি মামলা নিবে বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা প্রধান মামলা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার আমরা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ বলেন, আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব। এ নিয়ে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা প্রধান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাত ৮টার দিকে আজাদীকে বলেন, মামলা এখনো হয়নি, তবে হবে হয়ত।