চবির পঞ্চম সমাবর্তনের যত আয়োজন ও নির্দেশনা

১৪ মে ঘিরে চলছে প্রস্তুতি সমাবর্তন বক্তা প্রধান উপদেষ্টা

ইমাম ইমু | শনিবার , ৩ মে, ২০২৫ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম সমাবর্তন। এতে অংশ নিচ্ছেন ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ২২ হাজার ৫৯৭ জন গ্র্যাজুয়েট। আগামী ১৪ মে এই বহুপ্রতীক্ষিত সমাবর্তনটির মূল অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘদিন পর সমাবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহউদ্দীপনার শেষ নেই। চবির পঞ্চম সমাবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। সমাবর্তন বক্তা হিসেবেও উপস্থিত থাকবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সভাপতিত্ব করবেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার।

এই বিশাল আয়োজনকে কেন্দ্র করে পুরোদমে প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত রয়েছে সরকারি বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক দল। এ সমাবর্তন বাস্তবায়নে কাজ করছে ১৯টি উপকমিটি। দিনরাত এক করে শিক্ষককর্মকর্তাকর্মচারীরা সমাবর্তন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছেন। সমাবর্তন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া সমাবর্তন ঘিরে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে চবি ক্যাম্পাস।

যত নির্দেশনা : ৫ম সমাবর্তনে কনভোকিরা গাউন, সনদ, খাবার, স্যুভেনির ও উপহারসামগ্রী নিজ নিজ বিভাগ বা ইনস্টিটিউট থেকে গ্রহণ করবেন। আগামী ১২ ও ১৩ মে কনভোকিরা অফিস চলাকালীন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সাময়িক বা মূল সনদ জমা দিয়ে অগ্রিম গাউন গ্রহণ করতে পারবেন। ১৪ মে সকাল ৭টা থেকে অবশিষ্ট গাউন বিতরণ করা হবে এবং দুপুরের খাবার সকাল ১০টা ৩০মিনিট থেকে বিতরণ করা হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে কনভোকিগণ গাউন জমা দিয়ে সনদ ও উপহারসামগ্রী গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনে রাত ১০টা পর্যন্ত গাউন জমা নিয়ে সনদ ও উপহারসামগ্রী প্রদান করা হবে। সকলকে দুপুর ১টার মধ্যে অবশ্যই অনুষ্ঠানের মূল প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে হবে এবং অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে প্যান্ডেল ত্যাগ করা যাবে না।

কনভোকিদের জন্য বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে কনভোকি কার্ড ছাড়া সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না এবং এটা হস্তান্তরযোগ্য নয়। কনভোকি কার্ড প্রদর্শন করে গাউন নিতে হবে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর কনভোকিদেরকে গাউন, সনদ, খাবার, স্যুভেনির ও উপহারসামগ্রী প্রদান কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট ডিনদের দায়িত্বে থাকবে। চিকিৎসা অনুষদের অধীন কলেজগুলোর দায়িত্বে থাকবেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর দায়িত্বে থাকবেন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন, চারুকলা ইনস্টিটিউটের দায়িত্বে থাকবেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন, সিইউসিবিএ এর দায়িত্বে থাকবেন বাণিজ্য অনুষদের ডিন এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের দায়িত্বে থাকবেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন। যেসব কনভোকি অঙ্গীকারনামা আপলোড করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন অথবা যাদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড নাই, তারা অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন কার্ড অথবা ফিস বাবদ ৩০০ টাকার পেঅর্ডার নিয়ে আসতে হবে, গাউন নেয়ার সময় তা অবশ্যই জমা দিতে বলা হয়েছে। অবশ্যই সাময়িক সনদ বা মূল সনদের মূল কপি একটি খামে করে (খামের উপরে নাম, আইডি, বিভাগ বা কলেজের নাম লিখতে হবে) নিয়ে এসে গাউন নেয়ার সময় তা অবশ্যই জমা দিতে হবে। স্ব স্ব বিভাগ থেকে এসব গ্রহণে এর অধিভুক্ত কলেজসমূহের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিন অফিসের নির্দিষ্ট বুথ থাকবে। যথাসময়ে অক্ষত অবস্থায় গাউন ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে সনদ সংগ্রহের সময় নগদ তিন হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধ করতে হবে। কনভোকিদের প্রদত্ত টুপি ফেরত দিতে হবে না। মূল সমাবর্তনস্থলে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঢুকার সময় ব্যাগ, মোবাইল ফোন, ছাতা, ক্যামেরা, টেপরেকর্ডার বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে রাখা যাবে না।

যাতায়াত নির্দেশনা : কনভোকিদের ব্যক্তিগত কোনো গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং মূল গেইট (হাটহাজারী রোড) থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। ক্যাম্পাসে আসাযাওয়ার জন্য অতিরিক্ত শিডিউলে শাটল ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ১০০টি শাটল বাস থাকবে। এ বাসগুলো দিনব্যাপী কনভোকিদের আনানেওয়া করবে। কনভোকিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট; ষোলশহর শপিং কমপ্লেঙ, নিউ মার্কেট, জমিয়াতুল ফালাহ, পলিটেকনিক মোড় (ফ্লাইওভার থেকে নেমে) থেকে বাসের ব্যবস্থা থাকবে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বাসগুলো শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করবে এবং ক্যাম্পাস থেকে ফিরতি বাসগুলো বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলবে।

শাটল ট্রেনের সময়সূচি : বটতলী স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১৫মিনিট, ৭টা ৪০মিনিট, ষোলশহর স্টেশন থেকে ৯টা ৩০মিনিট, ১০টা ১৫মিনিট ও ১১টা ৩০মিনিট এবং ফিরতি ট্রেন ক্যাম্পাস থেকে বিকাল ৪টা ৪০মিনিট, সন্ধ্যা ৬টা ২০মিনিট ও রাত ৯টা ৪৫মিনিট। সমাবর্তন দিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের সময়সূচি ও পরিবহন বিষয়ক বিস্তারিত দিকনির্দেশনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

ক্লাস ছুটি ঘোষণা : ১৩ ও ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত এবং ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ১২ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরনের ছুটি বাতিল এবং সকলকে অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সমাবর্তনের দিন বিভিন্ন অনুষদের ক্যান্টিনগুলো এবং চাকসু ক্যান্টিন, সকল ক্লাস রুম, পরীক্ষার কক্ষ ও অডিটোরিয়ামগুলো খোলা থাকবে।

নিরাপত্তা : সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। এছাড়া সমাবর্তনের দিন পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার লোকবল দায়িত্বে থাকবে। এছাড়া পুরো ক্যাম্পাস পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ এবং ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট সড়ক মেরামত করা হচ্ছে।

১৯টি উপকমিটি : এই সমাবর্তন সুন্দরভাবে বাস্তবায়নের জন্য ১৯টি উপকমিটি কাজ করছে। উপকমিটিগুলো হলো, . রাস্তাসমূহ মেরামত/সংস্কার ও উন্নয়ন কমিটি। ২. পরিচ্ছদ কমিটি। ৩. স্যুভেনির কমিটি। ৪. বাজেট কমিটি। ৫. সনদ কমিটি। ৬. প্রচার ও প্রকাশনা কমিটি। ৭. প্যান্ডেল, সাজসজ্জা ও আসন ব্যবস্থাপনা কমিটি। ৮. পরিবহন কমিটি। ৯. আপ্যায়ন কমিটি। ১০. র‌্যালি ও অভ্যর্থনা কমিটি। ১১. সমাবর্তন অনুষ্ঠান কমিটি। ১২. উপস্থাপনা কমিটি। ১৩. শৃঙ্খলা কমিটি। ১৪. ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক কমিটি। ১৫. স্পন্সর কমিটি। ১৬. সফটওয়্যার ক্রয় কমিটি। ১৭. কোর কমিটি। ১৮. ডি.লিট কমিটি। ১৯. সমন্বয়/সহায়ক কমিটি।

সমাবর্তন বক্তা ড. ইউনূস ও ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান : সমাবর্তনের প্রধান অতিথি এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, অর্থনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রায় তিন দশক পর তিনি আবার তাঁর প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পা রাখছেন, যা এই আয়োজনে এক ব্যতিক্রমী আবেগ এবং উচ্ছ্বাস যোগ করেছে। তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লিটারেচার’ ডিগ্রিও প্রদান করা হবে। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নাম ড. ইউনূস ভবন নামে নামকরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর দিকে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদটিই ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবন।

অনুষ্ঠান শিডিউল : সমাবর্তনের দিন সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে গাউন গ্রহণ করতে হবে। এরপর সাড়ে ১০টা থেকে দুপুরের খাবার দেওয়া হবে। দুপুর একটার মধ্যে সকল কনভোকিকে সমাবর্তনস্থলে প্রবেশ করতে হবে। এরপর দুপুর দুইটার দিকে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এটি আইন অনুষদ প্রাঙ্গণ বা উত্তর ক্যাম্পাস থেকে শুরু হতে পারে। র‌্যালি শেষে অতিথিরা আসন গ্রহণ করবেন। এরপর জাতীয় সঙ্গীত ও ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর সমাবর্তন সভাপতি শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টাকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে সমাবর্তন বক্তব্য ও অন্যান্যদের বক্তব্যের মাধ্যমে ৪টার মধ্যে মূল অনুষ্ঠান শেষ হতে পারে। এরপর কনভোকিরা গাউন ফেরত দিয়ে সনদ ও উপহার সামগ্রী গ্রহণ করবেন।

সদস্য সচিবের বক্তব্য : সমাবর্তনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে সমাবর্তন কমিটির সদস্য সচিব ও চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী আজাদীকে বলেন, সমাবর্তন নিয়ে আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। চবির পঞ্চম সমাবর্তনকে সুসম্পন্ন করতে আমরা ১৯টি উপকমিটি গঠন করেছি। প্রত্যেক কমিটি আপ্রাণ চেষ্টা করছে, শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর সমাবর্তন উপহার দিতে। আজকে (শুক্রবার) থেকে আমাদের প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়েছে। দেড় লক্ষ বর্গফুটের প্যান্ডেল করা হচ্ছে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানের জন্য। কনভোকিদের বসার আসন বিন্যাস এবং সম্ভাব্য দুর্যোগ মাথায় রেখে যাবতীয় কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ সনদের কাজ শেষ হয়ে গেছে। ১৪ হাজার সনদে আমি স্বাক্ষর করেছি। এরপর উপাচার্য স্যার করবেন। বাকিগুলোর কাজও চলমান রয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, আমাদের কনভোকি বেশি হওয়ায় প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে হচ্ছে। আমরা আশা করছি সেদিন প্রায় ১লাখ মানুষের জনসমাগম হবে ক্যাম্পাসে। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। সকল স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। তিনি জানান, সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারে সদস্যদের জন্য প্যান্ডেলে আসনের ব্যবস্থা থাকবে না। তবে অনুষদ প্রাঙ্গণে গেস্টদের জন্য সাময়িক বসার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা বসে বিশ্রাম নিতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে কাঠুরিয়া আহত
পরবর্তী নিবন্ধপরিত্যক্ত টিলায় গর্ত খুঁড়তে গিয়ে বালু চাপা, দুই শিশুর মৃত্যু