চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন অনুষদের পাশে অবস্থিত চবির মেডিকেল সেন্টার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার শিক্ষার্থী, ১ হাজার ২শ শিক্ষক এবং প্রায় ২ হাজার কর্মকর্তা–কর্মচারীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য একমাত্র ভরসা এ মেডিকেল সেন্টার। এর মধ্যে সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে মেডিকেলের প্রয়োজন পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ছাড়াও আশপাশের স্থানীয় লোকজনও এই মেডিকেলে জরুরিভাবে স্বাস্থসেবা নিয়ে থাকেন। তবে এটি শিক্ষার্থীদের কাছে ‘নাপা সেন্টার’ নামে পরিচিত। চবির এই মেডিকেল সেন্টার নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অবশেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ২৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে কাজ চলছে, দ্রুত আলাদা ভবন নির্মাণ করা হবে। আগামী অর্থ বছরে এ নিয়ে বাজেট নির্ধারণ হবে বলেও জানা গেছে। নতুন হাসপাতাল হলে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি স্থায়ীভাবে এতে চিকিৎসা নিতে পারবে। রাতে–বিরাতে আর শহরের হাসপাতালে দৌঁড়াতে হবে না। হাসপাতালের পাশাপাশি সেটি মেডিকেল হিসেবেও ব্যবহার হবে। আধুনিক চিকিৎসা সেবাসহ উন্নতমানের ওষুধ মজুত থাকবে নতুন হাসপাতালে।
চবির বর্তমান মেডিকেল সেন্টার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, এখানে নাপা আর ওমিপ্রাজল ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ মিলে না। এছাড়া পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা, সময় মতো অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া, জরুরি অনেক ওষুধের ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই মেডিকেল সেন্টার। এজন্য রাত–বিরাতে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ছুটতে হয় শহরের মেডিকেলে। এছাড়া ভালো করে যাচাই–বাছাই না করে চিকিৎসকরা ওষুধ লিখে দেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। চবির মেডিকেল সেন্টার নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও এর স্থায়ী সমাধান হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে চবির চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৈয়ব বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি অনেক ওষুধ তালিকা করে প্রশাসনকে দিয়ে আনিয়েছি। এরমধ্যে এন্টিবায়োটিক, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় অনেক দামী ওষুধও রয়েছে। বেশি দামীগুলো তো নেওয়া সম্ভব না। এতো এতো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি, এরপরও যখন শুনি নাপা সেন্টার তখন সত্যি খারাপ লাগে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় আমরা আমলে নিয়ে নিয়মিত তদারকি করছি।
কয়েক মাস আগেও শিক্ষার্থীরা চবির মেডিকেল সেন্টারে ওষুধ সরবরাহ ও অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা বৃদ্ধি, সাইক্রিয়াটিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবি পেশ করেন। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, চবি মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তাররা সময়মতো আসেন না এবং তাদের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নেই। নাপা ও ওমিপ্রাজল হচ্ছে সকল রোগের ওষুধ। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়লেও কোনো মনোচিকিৎসক নেই। ব্লাড টেস্ট, ইসিজি, এঙরে পরীক্ষা করার কোনো সরঞ্জাম নেই। ডাক্তার–কর্মচারীরা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন না। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় কাজেও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিপদে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না।
চবির নতুন মেডিকেল সেন্টার হলে এ ধরনের সমস্যাগুলো থাকবো না বলে জানিয়েছে বর্তমান প্রশাসন। আগামী অর্থবছরে এ সেন্টারটি নতুন জায়গায় স্থানান্তর করে একটি পূণাঙ্গ হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান চবির উপ–উপাচার্য (প্রশসান) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ডিপিপির মাধ্যমে মেডিকেল সেন্টারের জন্য একটি ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে একটি ২৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করার। সেই হাসপাতালে সকল ইক্যুইপমেন্ট থাকবে। এখন আমরা অল্প কিছু হলেই শিক্ষার্থীদের শহরে পাঠিয়ে দিতে হয়। সেটা যাতে না হয়, জরুরি চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য চিকিৎসা যাতে নিতে পারে শিক্ষার্থীরা। আর খুব বেশি ক্রিটিক্যাল হলে তখন না হয় ঢাকা–চট্টগ্রাম যাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে। এ নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।