চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক–শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারী মিলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বিচরণ। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশাল এ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়নি কোনো কেন্দ্রীয় স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি পরিবেশবান্ধব উপায়ে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস না করার ফলে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। অবশেষে দীর্ঘ ৫৯ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে শহীদ আব্দুর রব হল, শহীদ ফরহাদ হল ও অতীশ দিপংকর হলের পাশে এ জায়গাটি অবস্থিত। এটি ক্যাম্পাসের সর্ব উত্তরে নিরিবিলি বিশাল একটি স্থান।
চবি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে প্রধান হিসেবে রয়েছেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আল আমিন। এ কমিটির তত্ত্বাবধান করছেন চবির উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। সম্প্রতি তিনি জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এটা একটি সরকারি প্রকল্প হিসেবে কাজ করবে। এ নিয়ে শীঘ্রই সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে চুক্তির জন্য বৈঠক হবে। এ জায়গায় খুব নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্পট। শিক্ষার্থী, দর্শনার্থীরা আকর্ষিত হবে এতে। ইতোমধ্যে এখানে আসার জন্য একটি সড়ক করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার এই সম্পর্কে একটি সেমিনার হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে যাবতীয় বিষয়াদি বিস্তারিত আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে।
ক্যাম্পাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা জানান, অধিকাংশ অনুষদ ও ঝুপড়ির আবর্জনা ফেলা হয় যত্রতত্র স্থানে। নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার লোকজন বসতবাড়ির আশেপাশেই বর্জ্য ফেলে। ছাত্র–ছাত্রীদের হল, শিক্ষক কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার, কলোনি, দোকানপাট থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ নিঃসৃত বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরম পরিবেশ। উৎকট দুর্গন্ধের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা জমে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে মশা–মাছি ও কীট পতঙ্গের।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ময়লা–আবর্জনা জমছে। হোটেল ও ক্যাফিটেরিয়াগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং ময়লা–আবর্জনার মধ্যে খাবার পরিবেশন করা হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এখন ক্যাম্পাসে স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্য বজায় থাকবে। এমন দারুণ উদ্যোগের জন্য বর্তমান প্রশাসনকে ধন্যবাদ।
প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ইফেক্টিভ পদ্ধতিতে কিভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করছি। এ জায়গা ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হিসেবে ব্যবহার হবে। এখানে একটি ডাম্পিং স্টেশন হবে। তিনি বলেন, বায়োডিগ্রেডেবল মেশিন দিয়ে জৈব সার উৎপাদন করা হবে এখানে। ক্যাম্পাসের সব প্লাস্টিক সংগ্রহ করে এ জায়গায় স্তুপ করা হবে। সিনারেটর মেশিন দিয়ে সেসব প্লাস্টিক পুড়ে ফেলা হবে। তা থেকে আমরা সিরামিক তৈরি করার কাজ করবো। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটির কাজ শুরু করবো। উপ–উপাচার্য বলেন, চবি ক্যাম্পাসকে একটি মডেল গ্রিন ক্যাম্পাস হিসেবে রূপান্তরিত করা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যের একটি উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা। এ নিয়ে আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্য পূরণে আমাদের অংশীজনদের একান্ত সহযোগিতা কামনা করছি।