বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ গবেষণা করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম বরাবরই পিছিয়ে। এবার গবেষণা সম্পর্কে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে প্রথমবারের মতো ভিন্নধর্মী একটি আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র এবং চবি হায়ার স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটি।
গতকাল সোমবার দিনব্যাপী ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রকাশনা মেলা। এতে পুরোদিন লোকে লোকারণ্য ছিলো। ৭০টি স্টলে গবেষণাপ্রেমীরা ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। প্রতিটি স্টলে তাদের প্রকাশিত গবেষণা পেপার রয়েছে। সাজানো হয়েছে গবেষণা সম্পর্কে নানা উদ্যোগ। বড় বড় গবেষকদের পরিচিতি তুলে ধার হয়েছে। এ মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ছাড়াও নানা জায়গা থেকে দেখতে এসেছেন দর্শনার্থীরা। একাধিক দর্শনার্থী জানান, এ ধরনের কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বেশি হওয়া উচিত। গবেষণা সম্পর্কে আগ্রহী করতে এমন উদ্যোগ সহযোগিতা করবে।
গবেষণা মেলায় চবির ৩১টি বিভাগ, ২৪টি ল্যাবরেটরি এবং চট্টগ্রামের আরও ২০টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও এতে অংশ নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সিভাসু, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএসআইআর, এটমিক এনার্জি কমিশন, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফি রিসার্চ ইন্সটিটিউট, বন গবেষণা ইন্সটিটিউট, চিটাগাং রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর চিল্ড্রেন সার্জারি, পাসটো রিসার্চ গ্রুপ। আয়োজকরা জানান, চট্টগ্রাম বিভাগের গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণাকর্মকে সবার সামনে উপস্থাপন ও গবেষণার সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মত এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে চবির শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ উৎসব শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, উপ–উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান, জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও গবেষণা মেলার সমন্বয়ক প্রফেসর ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ভূগোল বিভাগের শিক্ষক ও গবেষণা মেলার সদস্য সচিব প্রফেসর ড. অলক পাল, চিটাগং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) মডারেটর ও মেলার পরিচালক প্রফেসর ড. আদনান মান্নান, মেরিন সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. সুমন গাঙ্গুলী এবং সিইউআরএইচএস এর সভাপতি মাহমুদ শরীফ। মূলবক্তা ছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
এছাড়া বিকালে রিসার্চ এঙিলেন্স অ্যাওয়ার্ড যেখানে সেরা গবেষক সম্মাননা, তরুণ গবেষক পুরষ্কার, সেরা নারী গবেষক অ্যাওয়ার্ড, সেরা গবেষণা প্রজেক্ট, সর্বোচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর গবেষণা, সেরা গবেষণা শিক্ষার্থী, সর্বোচ্চ বই প্রকাশক, সেরা উদ্ভাবকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪০ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
শিশুদের রোবটিঙ শিখাতে দ্যা টেক একাডেমি : মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিলো শিশু কিশোরদের রোবট ও অন্যান্য উদ্ভাবন নিয়ে রোবটিঙে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিম দি টেক একাডেমির ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শো ও উদ্ভাবনী পরিবেশনা।
টেক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শামস জাবের জানান, বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিশুদের রোবটিঙ শেখাতে কাজ করছে দ্যা টেক একাডেমি। আমরা শিশুদের পড়ালেখার বিষয়টিকে গেইমিং পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীরা যেন পড়ালেখাকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারে গেইমিংয়ের মাধ্যমে।
টেক একাডেমি হতে প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনে মুকাররাবিন ইরফাত মেহজাদ বলেন, আমি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করি। আমার বয়স এগারো বছর। আমি এই টেক একাডেমিতে এসে এনিমেশন করা শিখেছি। আমি রোবটিঙ শিখেছি। বিভিন্ন ধরনের সেইফ বা আকার আকৃতি তৈরি করতে পারি আমি।