চবিতে চার ছাত্রলীগ নেত্রীর মারামারি

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, তদন্ত কমিটি

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

কথা কাটাকাটির জেরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের পদধারী ৪ ছাত্রীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মারধরের শিকার দুই ছাত্রী ও অভিযুক্ত দুই ছাত্রী হল প্রভোস্ট বরাবর পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে হল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে এবং চার কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মারধরের শিকার দুই ছাত্রী হলেন, ছাত্রলীগের উপ-স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী সিমা আরা শিমু এবং উপ-ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাজমুন নাহার ইষ্টি। অন্যদিকে অভিযুক্ত দুই ছাত্রী হলেন ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের উপ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তাসফিয়া জাসারাত নোলক ও নাট্যকলা বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের উপ কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নির্জনা ইসলাম। এর মধ্যে হলে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তাসফিয়া জাসারাত নোলককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাজমুন নাহার ইষ্টি ও নির্জনা ইসলাম খালেদা জিয়া হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তাসফিয়া নোলক ২০৩ নম্বর কক্ষে ঢুকলে তাকে অনুমতি ছাড়া রুমে প্রবেশ করতে নিষেধ করায় নির্জনা ও নোলক উভয়ে সাজমুন নাহার ইষ্টির সঙ্গে তর্কে জড়ায়। এরপর সাজমুন নাহার ইষ্টি নির্জনার মা ও নোলকের বাবাকে এ বিষয়ে জানালে তাসফিয়া নোলক রাত ১০টার দিকে আবার ২০৩ নম্বর কক্ষে এসে ইষ্টির সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং হত্যার হুমকি দেয়। এসময় পাশের রুমের সীমা আরা শিমু ইষ্টির পক্ষ হয়ে নোলককে থামানোর চেষ্টা করলে নোলক তাকে চড় মারে। এরপর উভয়ে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। এসময় নির্জনা রুমমেট ইষ্টির বিরুদ্ধে গিয়ে নোলককে সহযোগিতা করেন।
একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে সিমা আরা শিমুর অনুসারীরা তাসফিয়া জাসারাত নোলকের বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। পরে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির আশ্বাসে তারা হলে ফিরে যান। হল সংশ্লিষ্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, তাসফিয়া জাসারাত নোলকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য বহনের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে মুচলেকাও দেয় নোলক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রী জানান, নোলক হলে প্রায়ই দেরি করে প্রবেশ করে।
জানা যায়, তাসফিয়া জাসরাত নোলক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী। সম্প্রতি চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মাদক সরবরাহের অভিযোগ তুলে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। পাশাপাশি তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
মারধরের শিকার সাজমুন নাহার ইষ্টি বলেন, পড়াশোনার ডিস্টার্ব হওয়ায় আমি নোলককে শুধু রুম থেকে চলে যেতে বলেছি। সে আমাকে খুন করার হুমকি দিয়েছে। তুই-তুকারি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এ নিয়ে আমরা হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা এটার সঠিক বিচার চাই। নোলকের পরিবারকে জানানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, সে যে বেয়াদবি করছে এটা শুধু তার পরিবারকে জানিয়েছি। আমি তার সিনিয়র, সে আমার সাথে এমন আচরণ করতে পারে না।
এ বিষয়ে তাসফিয়া নোলক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বেয়াদবি করিনি। আমাকে কক্ষ থেকে চলে যেতে বললে আমি চলে আসি। পরে তারা আমার পরিবারকে বিষয়টি জানালে আবার গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কেন এমনটা করলো। তখন তারা আমাকে আক্রমণ করলে আমিও পাল্টা জবাব দিই। মাদক অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি প্রয়োজনে ডোপ-টেস্ট দিতেও প্রস্তুত।
তদন্ত কমিটি গঠন ও শোকজ : চার ছাত্রলীগ নেত্রীর মারামারির ঘটনায় হল কর্তৃপক্ষ হলের সিনিয়র শিক্ষক ড. শাহ আলমকে আহ্বায়ক, আবাসিক শিক্ষক উম্মে হাবিবাকে সদস্য সচিব এবং সহকারী প্রক্টর আহসানুল কবির ও হাসান মুহাম্মদ রোমানকে সদস্য করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চার কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া হলে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ এনে কারণ দর্শানের নোটিশ দিয়েছে তাসফিয়া জাসরাত নোলককে। পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম সোহেল আজাদীকে বলেন, অভিযুক্ত নোলকের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ এসেছে প্রক্টর অফিস থেকে। সব মিলিয়ে হলে অনিয়মের অভিযোগ এনে আমরা তাকে শোকজ করেছি। আর ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। দোষিরা শাস্তি পাবে।
প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ছাত্রীদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। আমরা হল প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা যান সেখানে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় দোষিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি এখনই দুদিন করার ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধনৌবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয়ে ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ