চন্দনাইশে বাড়ছে শিম চাষ, কানিতে আয় দেড় লাখ

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | শনিবার , ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে বিস্তীর্ণ শিম ক্ষেত এখন ফুলেফলে ছেয়ে গেছে। অনুকূল আবহাওয়া আর ভালো দাম পাওয়ায় এ অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে জনপ্রিয় এই শীতকালীন সবজির আবাদ। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে ৫৫০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষাবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৩০ হেক্টর বেশি। বর্তমানে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে এই শিম পৌঁছে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ইতোমধ্যেই কৃষকরা পরিপক্ব শিম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি শিম পাইকারি বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী ১০১৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা পুরোদমে শিম সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে পারবেন।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ভোক্তা পর্যায়ে চন্দনাইশের শিমের চাহিদা থাকায় চাষের পরিধিও বাড়ছে দিন দিন। উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ শিম চাষ হয় দোহাজারী পৌরসভা, ধোপাছড়ি ও হাশিমপুর ইউনিয়নে। এরমধ্যে সর্বাধিক দোহাজারী পৌরসভায় ১৭০ হেক্টর, ধোপাছড়ি ইউনিয়নে ১৬০ হেক্টর, হাশিমপুর ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষাবাদ হয়েছে। শঙ্খচরের শিম চাষি মো. হাসান বলেন, বিজ্ঞান সম্মতভাবে শিমের চাষ করলে যুব সমাজ নিঃসন্দেহে সফলতার দেখা পাবে। তিনি জানান, শিমের চাষাবাদ করে স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুখে আছেন তিনি। একই এলাকার মো. মারুফ চলতি মৌসুমে ২ কানি (৮০ শতক) জমিতে শিম চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি পরিপক্ব শিম পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় করে বিক্রি করেছেন। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি তিনিও।

ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চিরিংঘাটা এলাকার কৃষকরা জানান, ৯০’র দশকে চিরিংঘাটা এলাকায় ব্যাপক হারে শিমের চাষাবাদ শুরু হয়। সেই থেকে শুরু, তাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি অগ্রহায়ন মাস থেকে শিম বিক্রি শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত শিম বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্তমান বাজার অনুযায়ী কানি প্রতি (৪০ শতক) গড়ে দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করা যাবে। শিম বিক্রির টাকায় ধারদেনা পরিশোধ করে পুরো বছরের সঞ্চয় করে নেন কৃষকরা। সেই সঞ্চয় দিয়েই সারা বছর সংসার চালান তারা। শিম চাষে তিন প্রকারের সুবিধা পাওয়া যায়। শিম ও শিমের বিচি বিক্রির পাশাপাশি শুকনো বিচিও সংরক্ষণ করা যায় সারাবছর। ফলে শিম চাষ তাদের জন্য এখন ব্যাংক ডিপোজিটের মতোই। ইতোমধ্যে শিম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চন্দনাইশের অনেক কৃষক।

উপসহকারী কৃষি অফিসার মানেশ দে জানান, চলতি মৌসুমে দোহাজারী পৌরসভার চাগাচর, লালুটিয়া, জামিজুরী, শক্সখনদের চরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৬০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। যা গত মৌসুমের তুলনায় ৩০ হেক্টর বেশি। প্রতি মৌসুমে বাড়ছে শিম চাষের পরিধি। শিম চাষ করে উপকৃত হচ্ছেন কৃষকরা। প্রথম পর্যায়ে শিম ও শিমের বিচি বিক্রি করেন এবং পরবর্তীতে বিক্রির জন্য শিমির বিচি শুকিয়ে সংগ্রহ করে রাখেন এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে বিক্রি করেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হোসাইন জানান, পাহাড়, নদী ও সমতল পরিবেষ্টিত চন্দনাইশে সিজনাল সবজির চাষাবাদ হয় প্রচুর। বিশেষ করে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ বেশি হওয়ায় চন্দনাইশ ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের শষ্যভাণ্ডার হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির পাশাপাশি শিম চাষও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখানে। চলতি মৌসুমে চন্দনাইশে প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে হয়েছে শিমের চাষাবাদ। যা গত মৌসুমের তুলনায় ১৩০ হেক্টর বেশি। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রণোদনা হিসেবে সরকারিভাবে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ প্রদান করায় সফল হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। তিনি জানান, বিগত ১৫ দিন আগে থেকেই এ অঞ্চলের কৃষকরা পরিপক্ব শিম বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। যা চলবে আগামী ২/৩ মাস পর্যন্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যারিস্টার আনিসের গ্রামের বাড়িতে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধ৬ দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আহসান উল্লাহ আটক