বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূখণ্ড, রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। কাজের খোঁজে বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে তরুণরা বিদেশে পাড়ি জমায়। প্রতিবছরই বহুসংখ্যক তরুণ প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারায়। এমনকি মৃত্যুমুখেও পতিত হয়। অথচ অনেক দেশেই দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে। দক্ষ শ্রমিকদের বৈধভাবেই সেসব দেশে যাওয়া সম্ভব। প্রযুক্তিনির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এখন দোরগোড়ায়। এই সময়ে শুধু কায়িক শ্রমের চাহিদা নেই বললেই চলে। তাই বর্তমান সরকার জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তার সুফলও মিলতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দ্রুত বাড়ছে। সেই প্রবাসী আয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন ফ্রিল্যান্সাররা। লেখাপড়া শিখেও আগে যারা শুধু গিন্নি ছিলেন, তাঁরাও এখন ঘরে বসেই বিদেশি মুদ্রা উপার্জন করতে পারছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ফ্রিল্যান্সার আইডি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দক্ষ কর্মজ্ঞানসম্পন্ন লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটুকু এগোবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমরা চলব।
দেশ গড়ার জন্য দক্ষ মানুষ গড়া সবচেয়ে জরুরি। দক্ষ শ্রমশক্তি না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। দেশে ঠিকমতো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে না। বিদেশ থেকে দক্ষ লোকবল এনে কারখানা চালাতে হয়। জানা যায় বাংলাদেশে এখনো প্রায় পাঁচ লাখ বিদেশি কাজ করছেন। তার ওপর আসছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। ব্লু ইকোনমি বা সামুদ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন। আইটিসহ অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর দক্ষ লোকের প্রয়োজন রয়েছে। কোথায় সেই দক্ষ জনশক্তি? তাই দক্ষ লোকবল তৈরির উদ্যোগকে আরো বেগবান করতে হবে। বিসিসির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, সারা দেশে ৩৯টি হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ শেষ হলে প্রায় তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে, যার মধ্যে যুবসমাজই সব থেকে বেশি কাজ পাবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনসহ দক্ষ কর্মী বাহিনী সৃষ্টিতে নানা রকম প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, আমাদের ছেলে মেয়েরা অনেক মেধাবী। অল্পতেই তারা শিখতে পারে। সরকার হিসেবে আমাদের কাজ হচ্ছে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া। সেটাই আমরা করে দিচ্ছি। দেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার আইটি সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ সহজলভ্য হলে এই সংখ্যা কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিগুণ তিনগুণ হয়ে যাবে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ আরো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগকেও উৎসাহিত করতে হবে। আমরা চাই, প্রকৃত অর্থেই দেশের জনসংখ্যা জনসম্পদে রূপান্তরিত হোক।