খাদ্যাভ্যাস ও জীবন যাপনের কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের হার বেশি। বিভিন্ন সময় জরিপ ও গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। হৃদরোগ বাড়ার কারণে হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লার একাংশ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একাংশের বিশাল জনগোষ্ঠীর হৃদরোগের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রায় সময় হৃদরোগ বিভাগের মোট শয্যারেে চয় তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এসব রোগীকে সেবা দিতে প্রায় চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়। কারণ দিন দিন হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে চিকিৎসক বাড়েনি। এই বিষয়টি অনুধাবন করে চট্টগ্রামেরই কৃতি সন্তান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এই কার্যক্রমে তিনি চট্টগ্রামের ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন স্তরের চিকিৎসকদের যুক্ত করেন। এরমধ্যে গত বছরের ২৫ নভেম্বর নগরীর ও আর নিজাম রোডে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন ঢাকার বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান। হৃদরোগ ছাড়াও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বহি:বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এছাড়া কম খরচে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষাও করতে পারছেন রোগীরা। এর বাইরে বিভিন্ন বিশেষ দিনে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেন চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে– স্বল্পব্যয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে উন্নত ও মানসম্মত হৃদরোগ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। হৃদরোগের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা ও তার প্রতিরোধে এই অঞ্চল তথা বাংলাদেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। চট্টগ্রাম অঞ্চলের হৃদরোগের প্রকোপ বিষয়ক গবেষণা, হৃদরোগীদের ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনা। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিজস্ব জায়গায় করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ), ক্যাথল্যাব, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), অপারেশন থিয়েটার ও অন্যান্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত ৫০০ শর্য্যার হৃদরোগ হাসপাতাল স্থাপন। এছাড়া দরিদ্র ও অসহায় হৃদরোগীদের বিনামূল্যে হৃদরোগের পরীক্ষা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান। কর্মরত চিকিৎসক ও নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পেশাগত মান উন্নয়ন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন হৃদরোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে সমঝোতা স্মারক তৈরি এবং অন্যান্যভাবে সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টি এবং পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান পূর্বক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও হৃদরোগ চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নির্ধারিত জঙ্গল সলিমপুরস্থ প্রায় পাঁচ একর জায়গায় চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের নিজস্ব হাসপাতাল নির্মিত হবে। সেখানে থাকবে সিসিইউ, ক্যাথল্যব, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটারসহ ৫০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ আধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল। পরবর্তীতে তা হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রূপ নেবে। নিজস্ব জায়গায় নির্মাণ কাজ শুরু হলে প্রাইভেট–পাবলিক–পাটনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ৬০:৪০ অনুপাতে সরকারি সহায়তা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের অনুদানে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চলছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ বলেন, সামর্থ্যবান হৃদরোগীদের কেউ কেউ চট্টগ্রামের বাইরে রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কিংবা অন্যান্য উন্নত দেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে হৃদরোগে আক্রান্ত বিশাল সংখ্যক রোগীর তুলনায় এই সংখ্যা নিতান্ত নগণ্য। আবার হার্ট অ্যাটাক ও হৃদরোগের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হয়আেবশ্যক। এখানে কালক্ষেপনে মৃত্যু ডেকে আনে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের হৃদরোগী চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব নয়। তাই চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনকে যত দ্রুত আধুনিক হৃদরোগের হাসপাতালে রূপ দেয়া হবে, তত দ্রুত চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আজাদী