চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই চট্টগ্রামকে একটি উন্নত, আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। গতকাল বুধবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। সভায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জনদুর্ভোগ কমাতে গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের বিষয়ে আগে নীতিমালা ছিল না। তাই যে যার ইচ্ছামত টাকা নিত। এখন আমরা ফিক্স করে দিয়েছি বাসা প্রতি সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। কেউ যদি সেখানে ১০০ টাকার কোন স্লিপও দেয় আপনারা প্রমাণ জমা দিবেন ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্ক অর্ডার আমরা ক্যান্সেল করে দিব। আর দোকান, শিল্প–কলকারখানা সেগুলোর একটা আলাদা রেট আছে। ওটা আমরা ফিঙ করেছি। তবে ভাসমান দোকান থেকে টাকা আদায় করা যাবে না কারণ সেগুলো অবৈধ এবং এগুলোকে আমরা উচ্ছেদ করি। টাকা আদায় করলে সেগুলোকে এক ধরনের বৈধতা দেয়া হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এখন মেডিকেল কলেজের সামনে আমরা উচ্ছেদ করছি। আমরা আগ্রাবাদে উচ্ছেদ করছি। যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ এরিয়া সে জায়গাগুলো আমরা ধরেছি। আস্তে আস্তে সব জায়গা ধরব। আমরা তাদেরকে আবার পুনর্বাসন যখন করব তখন তাদেরকে আমরা পে–মার্কেটের আওতায় নিয়ে আসবো। বাজারের জায়গায় আমরা স্পষ্ট বলে দিয়েছি–বাজার যেহেতু আমরা ইজারাদারকে দিয়েছি সেখানে কিন্তু এই শর্তটা থাকে যে সমস্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করার দায়িত্ব তাদের। কাজেই সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করে ময়লা সুনির্দিষ্ট জায়গায় এনে দিবে। আমার লোকজন গিয়ে সেটা সেকেন্ডারি গারবেজ স্টেশনে নিয়ে আসবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি শিশুদের সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করলে মেয়র বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা চসিক স্কুলগুলোতে হেলথ কার্ড চালু করেছি। শুধু পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা নয়, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের মাধ্যমেই একটি পরিচ্ছন্ন, সুস্থ ও সচেতন শহর গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা শিশুদের পার্সোনাল হাইজিন এবং নাগরিক দায়িত্বের বিষয়গুলো শিখাচ্ছি। পর্যায়ক্রমে চসিকের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কার্যক্রম সমপ্রসারিত করা হবে। আমাদের চসিকের স্বাস্থ্যখাতে ডাক্তারের স্বল্পতা পূরণের জন্য অমরা চিকিৎসক ও কনসালটেন্ট নিয়োগ দিবো। এছাড়া শিক্ষার ক্ষেত্রেও লেখাপড়া আরো জোরদার করার জন্য শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ নিয়ে আলোচনাকালে মেয়র বলেন, নগরবাসীকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে আমরা আমরা ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণ করেছি। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমরা চাচ্ছি–জনগণকে সচেতন করতে, সম্পৃক্ত করতে। ৪১টি ওয়ার্ডে চসিক পরিচালিত সকল স্কুল–কলেজে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সকল স্কুল–কলেজে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া নিয়ে গতানুগতিক ধারায় প্রিভেন্টিভ মেজারগুলোর সবগুলোই আমরা নিয়েছি। রিসেন্টলি আমরা একটা মেডিসিন মারার জন্য সংগ্রহ করেছি। খুব ইফেক্টিভ বলে আমরা মনে করছি কারণ আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে দেখেছি সেটা কাজ করছে। মশা ধ্বংস করছে। এর বাইরে কেন চিকুনগুনিয়া বেড়ে গেল–সেটা নিয়ে গবেষণা করছি। আগের বছর ডেঙ্গু বেড়ে গিয়েছিল চিকুনগুনিয়া কম ছিল। এ বছর চিকুনগুনিয়া বেড়ে গেল ডেঙ্গু কমে গেল। দুইটাই কিন্তু ভাইরাল ডিজিজ। ফাইনালি রিসার্চ করতে করতে পাওয়া গেল ডেঙ্গু অলরেডি এটা ইমিউনাইজড হয়ে গেছে। ডেঙ্গু হতে হতে ডেঙ্গুর চিকিৎসা এটা ইমিউনাইজড হয়ে গেছে। এজন্য ডেঙ্গু কমে গেছে। চিকুনগুনিয়া নতুন করে বেড়ে গেছে। এটা জাস্ট একটা রিসার্চের একটা হয়তো বা ইন্টারপ্রেটেশন হতে পারে। আরো হয়তো বা কারণ থাকতে পারে। সিএসসিআর, ট্রিটমেন্ট, পেডিকেয়ারসহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক–গবেষকদের সমন্বয়ে চিকুনগুনিয়ার এ ধরনের বিস্তৃতির বিষয়ে গবেষণা করে কারণ উদঘাটনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই এ ব্যাপারে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা যাবে।
সভায় উপস্থিত জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান, চসিকের চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রশংসনীয়। নগরীতে ভাসমান ব্যবসায়ীদের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ বাড়ছে। বর্তমানে রাস্তার পাশে, ফুটপাতে ভাসমান যে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ব্যবসা করে এতে করে নগরীতে যানজট সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি জনগণের চলাচলের বাধা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে লালখান বাজার নগরীর ব্যস্ততম জায়গা। এখানেও অনেক ভাসমান অস্থায়ী ব্যবসায়ীর কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই লালখান বাজারের এই ভাসমান যে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ প্রয়োজন।
এছাড়া লালখান ফ্লাইওভারে উঠার র্যাম্পটিকে বাইকাররা ইউটার্ন নিতে ব্যবহার করছে। এটি খুবই বিপদজনক। বেশকিছু দিন আগেও একটি দুর্ঘটনা হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ প্রেক্ষাপটে মেয়র সিডিএ’র প্রতিনিধিকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিনসহ বিভাগীয় প্রতিনিধিবৃন্দ, কোতোয়ালী থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ–প্রধান প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস.এম.এন জামিউল হিকমা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন, এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ–সহকারী প্রকৌশলী এ কে এম মামুনুল বশরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ কর্মকর্তা–কর্মচারীবৃন্দ।