চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সর্বস্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জানাই অভিনন্দন। সাংগঠনিক দক্ষতা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততাসহ ১৫ ক্যাটাগরিতে সার্বিক মূল্যায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এখন দেশসেরা। ২৬ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৪–২০২৫) মূল্যায়নে দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে প্রথম হয়েছে চসিক। এর আগে গত অর্থবছরের (২০২৩–২০২৪) মূল্যায়নে সিলেট ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে চসিক দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। চলতি অর্থবছরের মূল্যায়নে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, আঁরাই সেরা (আমরাই সেরা)। তাঁরা জানান, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’–এর বিভিন্ন কর্মসূচি ছিল দেশজুড়ে। আন্দোলন তীব্র হলে এর প্রভাব পড়ে দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলোর বিভিন্ন নাগরিক সেবা, উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে। পাঁচ আগস্ট সরকার পতনের পর যা আরো বৃদ্ধি পায়। ব্যতিক্রম ছিল না চসিকও। তবে ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর গতি আসে চসিকের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কাজে। বাড়তে থাকে নাগরিক সেবার পরিধিও। যার সামগ্রিক মূল্যায়নে দেশসেরা সিটি কর্পোরেশনের তালিকায় স্থান করে নেয় চট্টগ্রাম।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছর ২৩টি সূচকের উপর ভিত্তি করে সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন করা হয়। চলতি অর্থবছর নির্ধারিত সূচক ছিল ১৫টি। গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি সূচকগুলোর উপর ভিত্তি করে সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন করা হয়। গত সপ্তাহে এর ফলাফল প্রস্তুত করা হয়। যা আনুষ্ঠকিভাবে চসিককে জানিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত আনুষ্ঠানিক পত্রটিতে বলা হয়, ১ম বার্ষিক সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে ২য় স্থান অর্জন করে, যা নিঃসন্দেহে গর্বের ও প্রশংসনীয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার জন্য এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। ১৫টি সূচকের আলোকে পরিচালিত ২য় সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১ম স্থান অর্জন করে, যা ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
চসিকের এ সাফল্য অর্জনে যারা নিরলস পরিশ্রম, দায়িত্ববোধ ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছেন–তাদের অভিনন্দন জানিয়ে পত্রটিতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রতি বছরই সিটি গভর্ন্যান্স মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান অক্ষুণ্ন রাখবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, সিটি গভর্ন্যান্স সূচকে এই প্রথম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সারা দেশে সেরা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের। নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে আমাদের যে চেষ্টা তার মূল্যায়ন এটা।
পুরস্কার অর্জনের কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রতি নগরবাসীর প্রত্যাশা বেড়ে যাবে–তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, মশা নিধন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হবে সর্বাধিক আন্তরিকতাপূর্ণ।
সাফল্য অর্জনের পেছনের কারণ জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কর্পোরেশনকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছি। ক্লিন ও হেলদি সিটি করার যে কার্যক্রম, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করেছি, অবৈধ স্থাপনা ভেঙে পার্ক উন্মুক্ত করেছি, দীঘিগুলো উন্মুক্ত করার যে পরিকল্পনা এবং জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম শহর গড়ার পরিকল্পনা করে যে কাজ করছি; এই সূচকগুলোতে চট্টগ্রাম অন্য সিটি কর্পোরেশনগুলোর তুলনায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই আমরা দেশসেরা পুরস্কার পেয়েছি।
পুরস্কার পাওয়ায় চসিকের প্রতি নগরবাসীর প্রত্যাশা বৃদ্ধি পাবে; এক্ষেত্রে সে প্রত্যাশা পূরণে চসিক কি করবে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমরা চেষ্টা করব আগামীতেও যেন আমরা সেরা অবস্থান ধরে রাখতে পারি। আমরা জলাবদ্ধতামুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন শহর নগরবাসীকে উপহার দিতে চাই, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
চট্টগ্রাম শহর ৭০ লক্ষ জনসাধারণের শহর। এ কারণে নগরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, প্লাস্টিক বর্জ্য ও যানজটসহ আরো নানান সমস্যা নিরসনে জনগণ ও সিটি করপোরেশনকে এক যোগে কাজ করতে হবে। এই শহর শুধু সিটি মেয়রের একার নয়, এটি আমাদের সবার। তাই এই শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় একযোগে কাজ করতে হবে। পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এসবের কারণে সবখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নির্দিষ্ট বাজারের বাইরে ফুটপাতের হকার ও ভাসমান বিক্রেতাদের কারণে সৃষ্ট যানজট নিরসনে জনমত গড়ে তুলতে সিটি করপোরেশনকে সহায়তা প্রদানের করতে হবে।