চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ আসার পর শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাবেক সচিব প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলের ফল বাতিল করা হয়। ফলাফল বলতে তার একাডেমিক সনদ, নম্বর ফর্দসহ বাতিল করা হয়। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে বলেও জানান তিনি। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালে বোর্ডের সাবেক সচিব প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্রের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় নিজের ছেলেকে জিপিএ–৫ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিন পর ফলাফল জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়ে। পরে অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত ৯ জুলাই তাকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক পদে বদলি করা হয়। সরকার পতনের পর সেখান থেকে তাকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। তার আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে (ফৌজদারি মামলাসহ) মাউশির মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। একইসাথে তার সঙ্গে জালিয়াতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেদিন এ সংক্রান্ত পৃথক চারটি আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শতরুপা তালুকদার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম ক্যান্টম্যান্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নেন প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্রের ছেলে। ২৬ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণার পর তার ছেলের জিপিএ–৫ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে। সেসময় তিনি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন। অভিযোগ উঠে, প্রভাব খাটিয়ে জিপিএ–৫ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর সেটি গড়িয়েছে থানা থেকে আদালত পর্যন্ত। ছেলের খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের জের ধরে প্রথম থানায় যান তার স্ত্রী বনশ্রী দাস। নারায়ণ চন্দ্র নাথ বা তার পরিবারের কেউ এমন আবেদন করেননি–এমন অভিযোগ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। একইসঙ্গে এ পুনঃনিরীক্ষণ আমলে না নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনের গুঞ্জন উঠে। পরে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে ফলাফল জালিয়াতির বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। ৩ জুন বোর্ডে আসার কথা জানিয়ে গত ২৮ মে বোর্ড সচিব প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র নাথকে চিঠি পাঠায় তদন্ত কমিটি। ৩ জুন তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ৪ জুন তদন্ত স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র নাথ। এরপর আদালত ৮ সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেন। একইদিনে তদন্ত কমিটির নির্দেশনায় ট্রাংক ভেঙে দুই শিক্ষার্থীর মার্কশিট গায়েবে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে মাউশি এবং বোর্ডের আপিলে ওই নারায়ণ চন্দ্র নাথের তদন্ত স্থগিত চেয়ে রিটের আদেশ বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, মন্ত্রণালয় চারটি নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ফলাফল জালিয়াতি খতিয়ে দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, সেটা আমরা করেছি। আরেকটি হলো নারায়ণ চন্দ্র ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করা, এটি করা হবে। বাকিগুলো মন্ত্রণালয় দেখবে।