চট্টগ্রাম শহরকে ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন

| বৃহস্পতিবার , ৪ মে, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শহরকে ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে এগোচ্ছেন নগরের নীতিনির্ধারক মহল। সম্প্রতি আন্দরকিল্লা নগর ভবনের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট চট্টগ্রাম বিষয়ক অবহিতকরণ’ সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান স্মার্ট নগরের পরিকল্পনা ও ধারণাপত্র উপস্থাপন করলেন। চট্টগ্রাম শহরকে ‘স্মার্ট’ নগর বিনির্মাণে সিটি কর্পোরেশন অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের প্রথম স্মার্ট জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। দৈনিক আজাদীতে গত ১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, জেলা প্রশাসক ‘স্মার্ট চট্টগ্রাম’ বিনির্মাণে করণীয় বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।

এতে চট্টগ্রামের ব্যবসাবাণিজ্য, আর্থিক লেনদেনসহ সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ক্যাশলেস ট্রান্সজেকশন চালু করা, সকল সরকারি অফিসকে পেপারলেস এবং প্রেজেন্সলেস অফিসে রূপান্তরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষকে স্মার্ট বাংলাদেশের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা এবং প্রযুক্তিমনস্ক আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার নিমিত্তে কাজ করছি। এ সময় মেয়র আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন, ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা এবং নির্দিষ্ট স্থানে পার্কিং, স্মার্ট ইলেকট্রিক ক্যাবল ম্যানেজমেন্ট প্রভৃতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চটগ্রামকে একটি স্মার্ট নগরে পরিণত করার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রাম ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর নগরী। এই নগরীকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অনেক অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই নগরীর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন সত্যিকার অর্থে নানান আর্থিক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করার মতো দায়িত্ব পালনে সফল হতে পারেনি। অনেকের দৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এটাও সত্য যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রয়েছে। নগরীর বেনিফিশিয়ারি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় ও তহবিলের একটি অংশ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে এই নগরীকে আন্তর্জাতিক মানের উন্নীত করার সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। সর্বোপরি নাগরিক সুযোগসুবিধা এবং বিভিন্ন সেবাখাতগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে উঠবে। ভৌগোলিক শহর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ার হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের নাম উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাতীয় অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এ কারণেই চট্টগ্রামকে বলা হয় জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। আমদানিরফতানির ক্ষেত্রেও ৮০ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম থেকেই। এই চট্টগ্রাম থেকে সরকার যে ট্যাক্স নিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শতকরা ১ শতাংশ দিলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং চট্টগ্রামের উন্নয়নে অন্য কারোর উপর নির্ভরশীলতা আর দরকার পড়ে না।

২০০৮ সালে ঐতিহাসিক লালদিঘি ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, সরকার গঠন করতে পারলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধেই নেবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে তিনি সরকার গঠন করলেন এবং ঠিকই চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিলেন। আমরা দেখতে পাই, চট্টগ্রামে শুরু হয় উন্নয়নের মহাযজ্ঞ, সৃষ্টি হয় উন্নয়নের অনবদ্য ইতিহাস। এতোটাই উন্নয়ন এখানে হয়েছে এবং হচ্ছে তার সবটাই দৃশ্যমান। চট্টগ্রাম বন্দর পেয়েছে নতুন রূপ, সংযুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, চালু হয়েছে সিটিএমএস, সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইয়ার্ড ও সার্ভিস জেটি, বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে বহুগুণ, বেড়েছে রাজস্ব অর্জনের পরিমাণ।

চট্টগ্রামের উন্নয়নের দিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরের কারণে এতোসব উন্নয়ন নগরবাসী প্রত্যক্ষ করছেন। এই চট্টগ্রামকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরের লক্ষ্যে একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগরের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যেভাবে সমন্বয় সাধন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা এক কথায় প্রশংসনীয়। চট্টগ্রাম শহরকে ‘স্মার্ট’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন যেভাবে জেলা প্রশাসক দেখছেন, তার বাস্তবায়নে যদি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা একটা পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার পাবো নিঃসন্দেহে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে