চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে রানিং স্টাফদের বিক্ষোভ

মাইলেজের দাবিতে কাল থেকে কর্মবিরতি শুরু সারাদেশে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন রেলের রানিং স্টাফরা। মন্ত্রী, সচিব ও ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাসের পরও মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল না হওয়ায় গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর সঙ্গে জড়িত ট্রেন চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিটিইসহ শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৬০ বছর ধরে পেয়ে আসা মাইলেজ সুবিধা হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় রানিং স্টাফদের মধ্যে (ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিটি) ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আজ রোববার রাত ১২টার মধ্যে ব্রিটিশ আমল থেকে প্রাপ্ত মাইলেজ জটিলতা নিরসন না হলে আগামীকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) থেকে সারাদেশে ট্রেন না চালানোর আল্টিমেটাম দিয়েছেন ট্রেন চালকরা। এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন রানিং স্টাফরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, মাইলেজ জটিলতার বিষয়টি সমাধানের দাবিতে গত সাড়ে ৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময় তারা আন্দোলন করে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে রানিং স্টাফরা বারবার রেলমন্ত্রী, সচিব এবং ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার পর আশ্বাস দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, রেলওয়ে রানিং স্টাফদের প্রতি ৮ ঘণ্টা কর্ম সম্পাদনের জন্য এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ যে অর্থ প্রদান করা হয় তাই মাইলেজ। ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এজন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। রেলওয়ের ১৮৬২ সালের আইন অনুযায়ী ট্রেন চালক, সহকারী চালক, পরিচালক ও টিকিট চেকারদের এই বিশেষ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ, ওই পদে নিয়োগ বিধিমালাতে সেটাই বলা আছে। সেই নিয়ম অনুযায়ী শত বছর ধরে তারা সেই হিসেবে বেতনও পেয়ে আসছেন।

মাইলেজের হিসেব হলো, প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক বেসিকের সমপরিমাণ টাকা বেশি পাবেন। ৮ ঘণ্টায় একদিনের কর্মদিন ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা দুই তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেইভাবেই দেওয়া হয়। এছাড়াও মূল বেতনের হিসেবে অবসরকালীন ভাতা যা হয় তার সাথে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হয়। রেলে প্রচলিত এই পদ্ধতিকে বলা হয় মাইলেজ।

কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রের বেসামরিক কর্মীদের মূল বেতনের অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার বিধান নেই মর্মে অর্থ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে রেলের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা বাতিল করে দেয়। এতেই ক্ষিপ্ত হন ট্রেনের রানিং স্টাফরা। ফলে তাদের বেতন নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। এই বেতন জটিলতার নিরসন ও মাইলেজ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে রেলের রানিং স্টাফরা। বিষয়টি নিয়ে গত ২৩ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রী, সচিব এবং ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের নেতাদের বৈঠক হয়েছিল। বৈঠকে মন্ত্রী মহোদয় আমাদের কাছে আরো ১৫ দিন সময় চেয়েছেন। আমরা বলেছি, আমরা সাড়ে ৩ বছর সময় দিয়েছি। বারবার সময় নেয়া হলেও এই সাড়ে ৩ বছরে আমাদের দাবির কোনো অগ্রগতি হয়নি। এটাতো আমাদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন না। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা খুব ক্ষুব্ধ। এখন আর পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের ট্রেন চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিটিসহ সকলেই এখন মুখোমুখি অবস্থানে।

মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, রোববার (আজ) রাত ১২টার মধ্যে বিষয়টি সমাধান না হলে আগামীকাল থেকে সারাদেশে কোনো ট্রেন চালক ট্রেন চালাবে না। গার্ড, টিটিইরা গাড়িতে উঠবে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, গার্ড কাউন্সিলের নির্বাহী সভাপতি মনিরুজ্জামান, টিটিই কাউন্সিলের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সবুজ নন্দী, রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, নজরুল ইসলাম, রানিং স্টাফদের মধ্যে মির্জা মো. শাহেদ, আবদুল বারী প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে যোগ দেবেন ৬ হাজার নেতাকর্মী
পরবর্তী নিবন্ধঅনুমতি ছাড়া বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সম্পত্তি অর্জন করলে বাজেয়াপ্ত