চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) চীনের অর্থায়নে স্থাপিত হতে যাচ্ছে ‘কনফুসিয়াস সেন্টার’। চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে এই কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান, উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি ও এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগেই এ ইনস্টিটিউট কার্যক্রম শুরু করেছে। এর পাশাপাশি সম্ভবত আরেকটি কেন্দ্রও চালু রয়েছে। এর আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুইজন প্রতিনিধি চীনে গিয়েছিলেন, তবে তারা কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এবার যে চুক্তিটি হয়েছে তার মাধ্যমে শুধু চীনা ভাষা শেখানোই নয়, আমরা চীনা নাগরিকদের বাংলা ভাষাও শেখাব। এখানে তারা নিজেদের অর্থায়নে অবকাঠামো নির্মাণ করবে। আমরা শুধু জায়গা প্রদান করব। তিনি আরও বলেন, এ চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে ০.৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের আওতায় চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির পাঠদান ছাড়াও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়াও চীনা ভাষা শিক্ষা, গবেষণা কার্যক্রম, বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি এ তিনটি মূল ফোকাসে কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
চবি উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, চীনা সরকার ও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। আলোচনা ও চুক্তি প্রক্রিয়ায় আমি সরাসরি টিমের সদস্য হিসেবে যুক্ত ছিলাম। দেশ হিসেবে আমরা এ উদ্যোগ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হব।
উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান বলেন, আমাদের ৫৪টি বিভাগ আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস অনুসরণ করে। ভবিষ্যতেও আমরা এই মান বজায় রাখব। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে আমাদের আবাসিক সুবিধা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
যদিও কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে নতুন নয়, তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন হতে যাওয়া ইনস্টিটিউটটি হবে ভিন্নমাত্রার। এখানে বাংলার পাশাপাশি চীনা ভাষা শিক্ষা চালু হবে এবং তিনটি মূল ফোকাসে কার্যক্রম পরিচালিত হবে চীনা ভাষা শিক্ষা, যৌথ গবেষণা কার্যক্রম, বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি। আগামী এক বছরের মধ্যেই ইনস্টিটিউটটির কার্যক্রম শুরু হবে। প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো ও আর্থিক ব্যয় চীনা পক্ষ বহন করবে, তবে আয়ের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গে ভাগাভাগি হবে। পরিচালনার দায়িত্বে দুইজন পরিচালক থাকবেন, একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এবং অন্যজন চীন থেকে আগত কর্মকর্তা।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকেই কার্যক্রমের প্রস্তুতি ও প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। এ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে চীনা শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বাংলা ভাষা ও সমাজ–সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা করবে। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষার্থীরা চীনে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির আওতায় মোবাইল, গাড়ি, মোটরবাইকসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা চীনে কর্মসংস্থানের সুযোগও পাবেন।











