চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সড়কের শোচনীয় অবস্থা ঘুচবে কবে

| রবিবার , ৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটির অবস্থা এতোটাই নাজুক যে, বাইরে থেকে কেউ বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে নগরে প্রবেশ করার সময় একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়ে যায়। এই সড়ক দিয়ে দুটি গাড়ি পাশাপাশি যেতে পারে না। চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হলে বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে। সেই পরিকল্পনায় বিমানবন্দর সড়কটিকে অত্যন্ত আধুনিক ও চলাচলে বাধাবিঘ্নহীন করা জরুরি।
গত ৫ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই সড়কের নাজুক পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে। ‘যান চলাচলের অযোগ্য, পায়ে হাঁটাও দায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ভিআইপি রোড খ্যাত বিমানবন্দর সড়কের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠেছে। আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইপিজেড থেকে বন্দরটিলা পর্যন্ত এলাকায় রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ বিলীন হয়ে গেছে। খানাখন্দকে ভরে গেছে পুরো রাস্তা। বর্ষণ এবং ব্যবহার্য পানিতে সয়লাব হয়ে থাকা রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ দিয়ে যান চলাচল দূরের কথা, পায়ে হাঁটার অবস্থাও নেই। শহরের প্রধান সড়কটির বেহাল দশায় এলাকাবাসীর পাশাপাশি নগরবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সিডিএ বলেছে, রাস্তার পাশে কোনো ধরনের ড্রেন না থাকায় বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং দোকানপাটের ব্যবহৃত পানি রাস্তায় জমা হয়। পাশাপাশি জোয়ারের পানিতেও রাস্তাটির অবস্থা প্রতিদিনই শোচনীয় হয়ে উঠছে।
আমাদের সুপ্রিয় পাঠকদের নিশ্চয় স্মরণে আছে, এই সড়কের দুর্বিষহ অবস্থা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে যাওয়ার রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। খবরটা চট্টগ্রামবাসী তো বটেই, সারা দেশের মানুষও অবগত। যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে, যে সড়ক দিয়ে বিদেশি ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া-আসা করেন, সেই সড়কের এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার না ঘটার অন্যতম কারণ বিমানবন্দর সড়কের নাজুক অবস্থা। সেই সড়কের অবস্থা বছরের পর বছর এভাবে জরাজীর্ণ থাকা দুঃখজনক। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সড়কটির গুরুত্ব অনুধাবন করে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। তবু বছর কি বছর সড়কটি পড়ে আছে বেহাল অবস্থায়।
এখানে উল্লেখ করা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পসহ ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর ৭৬৯ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়ন, বিমানবন্দর সড়কে ৬০০ মিটার ওভার পাস নির্মাণ, ৩৮টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৪টি ব্রিজ, ২২টি কালভার্ট এবং ১০টি গোল চত্বর নির্মাণ।
আজাদীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজকে কেন্দ্র করে নগরীর প্রধান সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত বেহাল হয়ে উঠেছে। এতে আরো বলা হয়েছে. নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় রাস্তার অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। বন্দরটিলা থেকে ইপিজেড এবং মাইলের মাথা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকা যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগীরাই কেবল জানেন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে কী দুঃসহ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতোটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, গাড়ি তো বটেই, মানুষের স্বাস্থ্য-শরীরও অতিক্রম করছে সীমাহীন যন্ত্রণা। সড়কের এই অংশটিতে প্রতি কিলোমিটারে একেকটা গর্ত তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে এত বড় বড় গর্ত আছে যে, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পর্যন্তও আটকে যায়। চট্টগ্রাম শহরের লাইফ লাইন-খ্যাত বিমান বন্দর সড়কটিকে রাখতে হবে মসৃণ ও পরিচ্ছন্ন। চলাচলে কোথাও যেন বিঘ্ন না ঘটে, তার দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সড়কটি মেরামত করার উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে