চট্টগ্রাম বন্দরের অগ্রযাত্রায় সমৃদ্ধ হবে দেশ

| সোমবার , ২২ আগস্ট, ২০২২ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। চলতি বছর বিশ্বের ১০০ শীর্ষ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বের ৬৪তম ব্যস্ততম বন্দর। এক বছর আগের তালিকায় ৬৭তম অবস্থানে ছিল এই বন্দর। অবশ্য ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের মধ্যে ছিল ৫৮তম। ২০১৯ সালে ৬৪তম।
লয়েডস তালিকার ১০০ বন্দরের সর্বশেষ সংস্করণটি প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট)। ২০২১ সালে বিশ্বের অভিজাত বন্দর সুবিধাগুলোর বার্ষিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিসংখ্যান সমন্বিত করে লয়েড’স তালিকার ১০০ বন্দরের সর্বশেষ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।
হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ২০২১ সালে মোট ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউ (বিশ ফুট সমতুল্য ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডল করেছে, যা আগের বছরের ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউ থেকে বেশি, যা বছরে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি।
চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের কথা উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম লয়েড জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকার পরও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে আগের ট্র্যাকে ফিরে এসেছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশের গেটওয়ে খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান নেমে গিয়েছিল ৬৭তম স্থানে। এরও আগে ২০০৮ সালে এ তালিকায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরটির অবস্থান ছিল ৯৮তম।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান পত্রিকান্তরে বলেন, ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১৩ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি পেয়েছে, যার অর্থ মহামারির পরে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য তার আসল ট্র্যাকে ফিরে এসেছে। তিনি আরও বলেন, বন্দরের এ সফলতা হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য। বন্দরের স্টেকহোল্ডারা হলো বন্দরের প্রাণ।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সমুদ্র পরিবহনের গুরুত্ব অপরিসীম। সে-সম্পর্কে কম বেশি অনেকেই জানেন। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতি একক পণ্য পরিবহনে সবচেয়ে সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম হিসেবে এটি সর্বাধিক। বৈশ্বিক বাণিজ্যের শতকরা ৮০ ভাগের বেশি পণ্য এ পরিবহন মাধ্যমেই পরিবাহিত হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিদিনই সুদৃঢ় হচ্ছে। পোশাক শিল্পের পাশাপাশি অন্য বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। তবে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের অংশীদারত্ব ধরে রাখতে হলে প্রতিনিয়ত পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন এবং পণ্য উৎপাদন খরচ হ্রাসে উন্নতি করতে হবে। পণ্য উৎপাদন খরচে পরিবহন ব্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই মূলত সমুদ্র পরিবহনকে জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির মূল গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার হলো এই বন্দর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমদানি-রফতানি, শিল্পায়ন, শিল্প-কারখানা পরিচালনা, বৈদেশিক ও দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, সর্বোপরি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) খাতে সর্ববৃহৎ অংকের রাজস্ব আদায়ের চাবিকাঠি, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির হৃৎপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দর। বাংলাদেশের গেইটওয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করে।
করোনার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ১২টি করে জাহাজ খালাস করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে গতিশীলতা বেড়েছে। এটা আমাদের জন্য সুখবর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১২ বছর ধারাবাহিকভাবে দেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর নয়, পুরো দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধারা বজায় আছে। পৃথিবীর অনেক দেশ নেতৃত্বের কারণে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বৈশ্বিক সূচকের মাপকাঠিতে সর্বাপেক্ষা ব্যস্ত একশ’ কন্টেইনার-পোর্টের তালিকায় আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে আসা কম গৌরবের নয়। দুই বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর বেশ দ্রুতই কয়েক ধাপ অতিক্রম করেছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক পোর্ট-শিপিং সার্কেলে চট্টগ্রাম বন্দরের সাফল্য দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
তবে এখানেই যেন শেষ না হয়। এখন থেকে আরও বেশি উদ্যমী হয়ে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এই চট্টগ্রাম বন্দরের যত বেশি উন্নতি হবে, দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে। এই বন্দরের কার্যক্রমের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করতে চায়।চট্টগ্রাম বন্দর শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দেশকে সক্ষমতার বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি। আমরা তার অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দিত করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে