চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিকেলের মাঠটা তখন প্রাণবন্ত। সহপাঠীদের উল্লাস, হাসি আর বলের পেছনে ছুটে চলা পায়ের শব্দে মুখর চারদিক। সেই মাঠেই এক মুহূর্তে থেমে গেল সব আনন্দ, নেমে এলো স্তব্ধতা ও কান্নার সুরে ভরা এক বিকেল।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের পদ্মপাড়া গ্রামের শিবু মহাজনের ছেলে বিজয় দত্ত (১৯) চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল টেকনোলজির ৬ষ্ঠ পর্বের শিক্ষার্থী। প্রাণবন্ত, হাসিখুশি আর খেলাধুলা-প্রেমী এই তরুণ প্রতিদিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলেও বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে মাঠে নামে। খেলার মাঝপথে হঠাৎ করেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
প্রথমে সহপাঠীরা ভেবেছিল, হয়তো অতিরিক্ত গরম বা ক্লান্তির কারণে মাথা ঘুরে পড়েছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই দেখা যায়, বিজয়ের আর কোনো সাড়া নেই। সবাই মিলে বিজয়কে দ্রুত স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়, পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক বিজয়কে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, বিজয় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করিডোর তখন নিস্তব্ধ। কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। কয়েক ঘণ্টা আগেও যে ছেলেটি হাসছিল, মাঠে বল দৌড়াচ্ছিল। সে এখন নিথর দেহে শুয়ে। বন্ধুরা কেউ অবিশ্বাসে তাকিয়ে থাকে, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে।
নিহত বিজয়ের মামাতো ভাই বিধান মিত্র বলেন, “বিজয় ছোটবেলা থেকেই খুব প্রাণবন্ত ছিল। সবার মুখে হাসি ফোটাত, কখনো কাউকে কষ্ট দিত না। সকালে ফোনে কথা হয়েছিল ওর সঙ্গে, বিকেলে যে এমন খবর শুনব, ভাবতেই পারিনি। এক মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল।”
নিহত বিজয়ের পিসিতোবাবু কাজল কান্তি দাশ বলেন, “সকাল থেকে সে ক্লাস করেছিল। পরে বিকেলে খেলতে যায়। খেলার শেষ পর্যায়ের দিকে হঠাৎ সহপাঠীদের বলতে থাকে, ‘আমার কেমন জানি লাগছে।’ কথাটা বলার পরই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে দ্রুত স্থানীয় ক্লিনিকে নেওয়া হয়, সেখান থেকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ফিরল না।”
বিজয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটজুড়ে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। সহপাঠীরা কেউ কাঁদছে, কেউ নীরবে বসে আছে মাঠের এক কোণে। তারা বলছে, “বিজয় শুধু ভালো ছাত্রই না, খুব প্রাণবন্ত একজন মানুষ ছিল। ওর হাসি ছিল সবার প্রাণ।”
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. কামাল হোসেন বলেন, “তার এভাবে অকালে চলে যাওয়া আমাদের অত্যন্ত মর্মাহত করেছে। গতকাল সন্ধ্যার পর আমি খবর পাই যে, সে মাঠে খেলার সময় লুটিয়ে পড়ে এবং পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমরা তার পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”












