চট্টগ্রাম থেকে যাচ্ছেন বিএনপির এক লাখ নেতাকর্মী

১৭ বছর ৩ মাস পর ফিরছেন তারেক বিএনপিতে আনন্দের হাওয়া, উচ্ছ্বাস

মোরশেদ তালুকদার | বুধবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ ১৭ বছর সাড়ে ৩ মাস পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাই এখন বিএনপিতে বইছে আনন্দের হাওয়া। সেই হাওয়ার জোয়ারে উচ্ছ্বসিত দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ আনন্দ কেবল দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সেটি স্পর্শ করেছে সাধারণ মানুষকেও। তাই তো তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তাকে স্বাগত জানাতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশ থেকে দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও এখন রাজধানীমুখী।

বিএনপি নেতারা বলছেন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলো থেকে কমপক্ষে ১০ লক্ষ লোক ঢাকায় যাবেন তারেক রহমান রহমানকে বরণ করতে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা থেকে যাবেন এক লক্ষ। দলের পক্ষ থেকে ভাড়া করা ট্রেন, বাস, মাইক্রো ও হাইয়েসে করে গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা যাচ্ছেন তারা। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও যাচ্ছেন অনেকে।

জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের মাটিতে পা রাখবেন তারেক রহমান। এদিন ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় তাকে দেওয়া হবে সংবর্ধনা। যেখানে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম ঘটবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আজাদীকে জানিয়েছেন, সেখানে গতকালও অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছেন। ওরা ছিলেন উচ্ছ্বসিত।

কেন এত উচ্ছ্বাস : কারামুক্ত হয়ে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়েন তারেক রহমান। দীর্ঘ এ সময়ে লন্ডনে বসে পরিচালনা করেছেন দল। ২০০৯ সালে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাবরণ করলে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করে বিএনপি।

বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় তারেক রহমানই বিএনপির কান্ডারি। ফলে নেতার আগমনে তারা উজ্জীবিত। তাছাড়া যার হাত ধরে বিএনপি আগামীতে সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে তার প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বাস থাকাটাই স্বাভাবিক।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ ১৭১৮ বছর পর তারেক রহমানকে দেশের মানুষ কাছে পাবেন। স্বাভাবিকভাবে মানুষ খুশিতে আত্মহারা। তারেক রহমান দেশে না থাকলেও নেতাকর্মীদের কাছাকাছি ছিলেন। অনলাইনে তার বক্তব্য শুনেছেন। এখন সবাই স্বচোখে দেখবেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ উদ্‌গ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন ২৫ ডিসেম্বরের জন্য। তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ৩০০ ফিটে গিয়েছিলাম। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ গেছেন শুধু মঞ্চ দেখতে। এখান থেকে আমরা মনে করি ২৫ ডিসেম্বর বিশাল সমাবেশ হবে।

বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর তারেক রহমান দেশে ছিলেন না। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে স্কাইপে দেখেছেন। আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সবার সামর্থ্য ছিল না লন্ডনে গিয়ে দেখে আসার। এখন তাকে সবাই সামনে থেকে দেখবেন। এটা নিয়ে সবার মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা আছে। তিনি বলেন, আসলে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ও রাজকীয় অভিষেককে ঘিরে যে উচ্ছ্বাসউদ্দীপনা তা কেবল দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটা চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে।

চট্টগ্রাম৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিযান আজাদীকে বলেন, তারেক রহমানকে দেখার জন্য সারা দেশের মানুষ উদ্‌গ্রীব। তাই তাকে স্বাগত জানাতে সবাই ঢাকা ছুটছেন।

নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ দেড় যুগ পর লিডার আসছেন। ঈদের মতো খুশি লাগছে। দীর্ঘ সময় দেশে না থাকলেও বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের খবর রেখেছেন তিনি। মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তাই মানুষ তাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

১০ লক্ষ লোক যাবেন চট্টগ্রাম থেকে : বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক জেলাগুলো থেকে ৭ থেকে ১০ লাখ যাবেন ঢাকায়। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলা থেকে লাখের উপর লোক যাবেন। মহানগর থেকেও যাবে। আমরা দুটি স্পেশাল ট্রেনও নিয়েছি। হাটহাজারী থেকে একশর বেশি বাস ও ৮৫টি মাইক্রোবাস ভাড়া করা হয়েছে।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নেতাকর্মীদের উৎসাহ কেমন লক্ষ্য করছেন? এমন প্রশ্নে মীর হেলাল বলেন, উৎসাহটা এত প্রবল, আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে না। অনেকে ঢাকায় গিয়ে ৩০০ ফিটে বসে রয়েছে। অথচ মিটিং হবে আরো দুদিন পর। তাহলে দেখেন কি মারাত্মক উৎসাহ! সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের মানুষও উৎসাহউদ্দীপনার মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে বরণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বরণ করার জন্য মহানগর থেকে কমপক্ষে ১৫ হাজার লোক ঢাকায় যাবেন। ইতোমধ্যে অনেকে ঢাকায় চলে গেছেন, অনেকে পথে আছেন। সর্বশেষ আগামীকাল রাতে (বুধবার) যাবেন।

পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, দুটি ট্রেনের সম্পূর্ণ, আরেকটির অর্ধেক টিকেট পাওয়া গেছে। পাশাপাশি অন্যান্য ট্রেন থেকেও টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহানগর থেকে ১০০টি বাস ও দেড়শ মাইক্রো ও হাইয়েস ভাড়া করা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেও নিজ উদ্যোগে নেতাকর্মীরা বাসমাইক্রোতে লোকজন নিয়ে যাবেন। এ রকম আরো ১০০ বাস ও শতাধিক মাইক্রো যাবে। আসলে যে হারে মানুষ যেতে চাচ্ছে গাড়ি না পাওয়ায় সেভাবে আমরা সাপোর্ট দিতে পারছি না।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে ২০ হাজার লোক ঢাকায় যাবেন। অনেকে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছেন। যে যেভাবে পারছেন ছুটে যাচ্ছেন। ঢাকায় যাওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত (গত রাত ১০টা) ২৭০টির বেশি বাস এবং প্রায় ৫০০টি হাইয়েস ভাড়া করা হয়েছে। কালও তো সময় আছে। গাড়ির সংখ্যা আরো বাড়বে। আসলে যে পরিমাণ লোক যেতে চাচ্ছে তাদের বহন করার জন্য সেই পরিমাণ গাড়ি পাচ্ছি না। সব ভাড়া হয়ে গেছে। অনেকে ট্রাকপিকআপে করে যেতে চাচ্ছেন। আসলে শীতের দিনে তাদের খোলা গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। এরপরও অনেকে স্বউদ্যোগে চলে যাবেন।

উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, প্রতিটি উপজেলা থেকে ৫ হাজার করে সাতটি উপজেলা থেকে কমপক্ষে ৩৫ হাজার মানুষ তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় যাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে চার আসনে ব্যারিস্টার আনিসসহ ৫ প্রার্থীর নাম ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধহাতিয়ায় চর দখল নিয়ে সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ৫