চট্টগ্রাম থেকে ভাড়ায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে কেটে ফেলা হলো বার্জ

৭জনকে আসামি করে সোনারগাঁও থানায় মামলা, একজন গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ at ৮:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে একমাসের জন্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য ৩ কোটি টাকা দামের একটি বার্জ ভাড়া করে নেয়া হয় নারায়ণগঞ্জে। সেখানে পণ্য পরিবহন না করে বার্জটি একটি ডকইয়ার্ডে কেটে ফেলা হয় এবং রিরোলিং মিলে রড় বানানোর জন্য লোহা হিসাবে বিক্রি করে দেয় একটি চক্র। খবর পেয়ে জাহাজের মালিক দ্রুত ওই ইয়ার্ডে গিয়ে দেখেনতার জাহাজটি কেটে ফেলা হয়েছে। মালেক শাহ কুতুবদিয়া নামের বার্জটি এভাবে স্ক্র্যাপ করে ফেলায় মালিকপক্ষের অন্তত ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে থানায় রেকর্ডকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন কাদিরগঞ্জ মেঘনা নদীর তীরের এইচবি হারুন ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ডে বার্জটি কাটা হয়। ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে সোনারগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন বার্জ মালিকপক্ষ। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বার্জটির মালিক চট্টগ্রামের রাউজানের রাকেশ শর্মা ও মিঠুন শীল। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৪৫.৭৩ মিটার, প্রস্থ ১৪.৩২ মিটার এবং ডেক দণ্ডের গভীরতা ২.৭৪ মিটার। এই ডাম্ব বার্জের নিজস্ব কোনো চালিকাশক্তি না থাকায় এটি মূলত পণ্য পরিবহন ও খননকাজে ব্যবহৃত হয় এবং টাগবোটের সাহায্যে চলাচল করে।

এই বার্জটি বিভিন্ন সময়ে ভাড়ায় পরিচালনার সুবাদে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জাফর, যিনি চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও পূর্ব মোহরা এলাকার বাসিন্দা, মালিকপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেন। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়েই মোহাম্মদ জাফর সংঘবদ্ধ একটি চক্র এক মাসের জন্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকায় স্ট্যাম্পে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বার্জটি ভাড়া নেন। চুক্তি অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর বার্জটি চট্টগ্রামের বাকলিয়ার চরঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রতারক চক্রে অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের চাঁন্দগাঁও পূর্ব মোহরা এলাকার শাহাদাত, সোনারগাঁওয়ের ইকবাল, নোয়াখালীর নজরুল ইসলাম, ঢাকার মিরপুর শেওড়াপাড়ার এমদাদুল হক এবং মোহাম্মদ জাফর ও হোসেন। এছাড়া আরও ৫ থেকে ৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বার্জটির সারেং আশরাফ গোপনে মালিককে ফোন করে জানান যে বার্জটি শিপইয়ার্ডের ডকে তুলে কেটে ফেলা হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে মালিক রাকেশ শর্মা ও মিঠুন শীল দ্রুত সোনারগাঁওয়ে যান। তারা রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই ডকইয়ার্ডে গিয়ে দেখেন বার্জটির বিভিন্ন অংশ কেটে স্ক্র্যাপ করা হয়েছে। দুই মালিক বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্তদের সাথে কথা বললে তারা একেকবার একেক কথা বলতে থাকে। পরবর্তীতে দুই মালিককে দ্রুত সোনারগাঁও না ছাড়লে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। দুই মালিক সোনারগাঁও থানায় গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ বলেছে, প্রতারক চক্র বার্জটি কেনাবেচার দলিল তৈরি করেছে। আসামি মোহাম্মদ জাফর ক্রেতা সেজে বার্জটি ক্রয় করে এবং আসামি এমদাদুল হকের কাছে বার্জটি বিক্রি করেছে মর্মে স্ট্যাম্প তৈরি করে।

মালিক রাকেশ শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিজে উপস্থিত হয়ে দেখেছি জাহাজ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে আমার ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আইন অনুযায়ী আমি এর বিচার চাই।’

সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বার্জ কেটে ফেলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামিদের মধ্যে একজন সাবেক ছাত্রদল নেতা রয়েছেন বলেও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনের আগে যে তিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি
পরবর্তী নিবন্ধলড়লেন কেবল হৃদয়, হার দিয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের