ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান বলেছেন, চট্টগ্রামে বিডিএস রোলআউটের মধ্যে দিয়ে সারাদেশে আজ রোববার (গতকাল) থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (বিডিএস) কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। তিনি বলেন, প্রায় ১৩০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ শুরু হয় চট্টগ্রাম থেকে। চট্টগ্রামে শুরু হওয়া বিডিএস হবে মাঠে গিয়ে পরিচালিত শেষ জরিপ। মন্ত্রী গতকাল রোববার চট্টগ্রামে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) রোলআউটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন। ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বিশেষ অতিথি ছিলেন। খবর বাসসের।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের মূল উদ্দেশ্য অল্প সময়ে সমগ্র বাংলাদেশে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে তথা ভূ–সম্পদ জরিপ শেষ করা এবং পরবর্তীতে মাঠে গিয়ে সার্ভের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নিয়ে আসা। এছাড়া কোনো এলাকায় প্রাকৃতিক কারণে বড় ধরনের ভূমির বিচ্যুতি না ঘটলে রিভিশন্যাল সার্ভের প্রয়োজনীয়তাও থাকবে না ডিজিটাল ম্যাপ পার্টিশনের সুবিধার জন্য।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে পাঠানো সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অবৈধ জমি দখলের দিন ফুরিয়ে আসছে, অবৈধ জমি দখলের জন্য জেল ও জরিমানা–দুটিরই ব্যবস্থা আছে এই আইনে।
ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান জানান, বিডিএস কার্যক্রমে একই সাথে অনলাইনে মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান পাওয়া যাবে। ১৫ দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্ট দাগ সংশোধনের নকশাসহ খতিয়ান তৈরি হবে।
এর আগে গত বছরের ৩ আগস্ট পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার ইটবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিডিএস পাইলটিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী। পাইলটের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে গতকাল চট্টগ্রাম থেকে পূর্ণাঙ্গ বিডিএস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল বারিক, বিডিএস কার্যক্রমের ইডিএলএমএস প্রকল্প পরিচালক জহুরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রামের জোনাল সেটলমেন্ট অফিসার আফিয়া আখতারসহ ভূমি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা–কর্মচারীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা (পৌরসভাসহ) এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভার মোট ৬৩৪ মৌজায় ৯৩৩ বর্গ কিলোমিটার (২ লাখ ৩৮ হাজার একর) এলাকায় ‘ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন (ইডিএলএমএস)’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ের বিডিএস রোলআউট কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বিডিএস–এ অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য স্যাটেলাইট, ড্রোন তথা ইউএভি এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সমন্বয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা অফিসের মধ্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠাসহ অটোমেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে।
বিডিএসের পুরো সিস্টেমটি জাতীয় ভূমিসেবা অটোমেশন সিস্টেমের একটি মডিউল হিসাবে ইন্টেগ্রেট করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও–রেফারেন্সকৃত মৌজা ম্যাপ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। জমি বিক্রির পর নামজারি খতিয়ান পরিবর্তনের সাথে সাথে ম্যাপের সীমানা পরিবর্তন হয়ে যাবে।
এছাড়া সুষ্ঠুভাবে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করার সুবিধার্থে দুটি আলাদা প্রকল্পের আওতায় যুগপৎভাবে পর্যায়ক্রমে সমগ্র বাংলাদেশে বিডিএস কার্যক্রম সম্পাদন করা হবে। প্রকল্প দুটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। দুটি প্রকল্পের একটি হচ্ছে বর্ণিত ‘ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন (ইডিএলএমএস)’ প্রকল্প। এর জন্য সরকার ও কোরিয়া ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) অর্থায়নে মোট ৩৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি খাত থেকে ৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং কোরিয়া থেকে ৩০৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
অপরটি হচ্ছে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ (এসওসি–ডিডিএস) শীর্ষক প্রকল্প। এর জন্য সরকারের অর্থায়নে ১২শ ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় কিছুদিন পর বিডিএস রোলআউট শুরু হবে পুরো বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রথম আধুনিক ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে প্রোগ্রাম তথা ভূ–সম্পদ জরিপ কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছিল ১৮৮৮ সালে তৎকালীন চটগ্রাম জেলার অন্তর্গত কঙবাজার মহকুমার রামুতে। এই জরিপ কার্যক্রম এর মৌলিক জাতিবাচক নামেই তথা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস সার্ভে) নামে পরিচিত ছিল। রামুর অভিজ্ঞতার আলোকে ১৮৯০ সালে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে সমগ্র পূর্ববঙ্গে সিএস সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৪০ সালের দিনাজপুর জেলায়। তৎকালীন চট্টগ্রামের কিছু এলাকা এবং সিলেট প্রশাসনিকভাবে বাংলার অংশ না হওয়ায় এসব যায়গায় সিএস সার্ভে পরিচালিত হয়নি।