চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য পৌঁছাবে ১৬ দিনে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের সাথে ইউরোপের কন্টেনার জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। এতদিন চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য যেতে ২৬-২৭ দিন লেগে যেত। এখন চট্টগ্রাম থেকে ১৬ দিনে পণ্য পৌঁছাবে ইউরোপে। অর্থাৎ সাশ্রয় হবে ১০/১১ দিন। ইতোমধ্যে ইউরোপ থেকে পাঠানো প্রায় এক হাজার টিইইউএস খালি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে নামানো হয়েছে। এগুলোতে ইউরোপমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য বোঝাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী মাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম-ইতালী রুট পুরোপুরি গতিশীল হবে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জাহাজের চলাচল শুরু হয়েছে ১৯৭৭ সালে। ছয়টি কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ ৩১ লাখ টিইইউএস-এ উন্নীত হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে পণ্য বোঝাই কন্টেনার জাহাজ সিংগাপুর, কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও তানজুম পালাপাস হয়ে চলাচল করতো। আমদানিকৃত পণ্য বোঝাই কন্টেনার উক্ত চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে আসার পর ওখান থেকে ফিডার জাহাজে বোঝাই করে চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হতো। এদিকে রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার ফিডার জাহাজের মাধ্যমে উক্ত চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে পাঠানো হতো। ওখান থেকে কন্টেনারগুলো মাদার ভ্যাসেলে করে নানা দেশে পাঠানো হতো। এতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমে নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হতো। কোন কারণে সময়মতো ফিডার ভ্যাসেল চলাচল না করলে মাদার ভ্যাসেল মিস হয়ে যেতো। আবার মাদার ভ্যাসেল মিস হলে এয়ার শিপমেন্ট করার নজিরও রয়েছে। এতে তৈরি পোশাক খাত নানা সমস্যায় পড়তো। বড় বড় উৎসবের আগে বিশ্বের শীর্ষ বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলো বিপদে পড়ে যায়। বিশেষ করে সময়মতো মাদার ভ্যাসেল ধরার উপর ইউরোপ আমেরিকার বড় দিন কিংবা নিউ ইয়ারের ব্যবসার অনেক কিছু নির্ভর করে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঝুঁকি কমিয়ে টেনশনমুক্ত ব্যবসা করার জন্য ইউরোপের বড় বড় বায়াররা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের সাথে ইউরোপের জাহাজ চলাচল শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম-ইতালী রুট চালু করা হয়েছে। মুলত, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম-ইতালী রুটে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। ইউরোপের বায়ারদের সহায়তায় ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠানটি এ সেবা চালু করে বলেও সূত্র জানায়। এর আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার নিয়ে সরাসরি ইতালীর সমুদ্রবন্দর সিভিটাভিসিয়ায় চলাচল করবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ইউরোপের অন্যান্য বন্দরেও চলাচল করবে। প্রাথমিকভাবে দুইটি কন্টেনার জাহাজ দিয়ে রুটটি চালু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এমভি ক্যাপ ফ্লোরেস নামের একটি কন্টেনার জাহাজ ৯৭৫ টিইইউএস খালি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে নামিয়ে দিয়েছে।
গত শনিবার জাহাজটি কন্টেনারগুলো নামিয়ে দিয়ে চীনের পথ ধরেছে। এগুলোতে তৈরি পোষাক শিল্পের ইউরোপমুখী পণ্য বোঝাই করা হচ্ছে।
আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে অপর একটি জাহাজ খালি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। ওই জাহাজটি খালি কন্টেনারগুলো নামিয়ে দিয়ে ফিরতি পথে রপ্তানি পণ্য বোঝাই ৯৭৫ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে যাবে। পরবর্তীতে যে জাহাজটি আসবে সেটি কাঁচামাল বোঝাই কন্টেনার ও খালি কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রামে আসবে এবং ফিরতি পথে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ইতালী চলে যাবে। বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ১২শ’ টিইইউএস ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি জাহাজ এ রুটে নিয়মিত চলাচল করবে। ফলে তৈরি পোষাকখাতের সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি কোটি কোটি ডলারের অর্থও সাশ্রয় হবে।
জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। এই রুট দেশের তৈরি পোষাক রপ্তানিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

তিনি বলেন, ইতালীর বন্দর থেকে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে সময় লেগেছে ১৬ দিন। ফলে এক মাসে দুই ভয়েজ সম্ভব না হলেও ৪০দিনে হবে। নতুন রুটে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের পথ ধরলে কম সময়ে পণ্য ইউরোপের বাজারে পৌঁছবে।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি পণ্যের ৬০ শতাংশ ইউরোপের দেশগুলোতে যায়। এখন ইউরোপে কম সময়ে বিদেশি ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ক্রেতারা দ্রুত পণ্য নিতে চায়। এ উদ্যোগ সফল হলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমাদের তৈরি পোষাক খাত বেশ সুফল পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচতুর্থ ধাপে নৌকা-স্বতন্ত্র সমানে সমান
পরবর্তী নিবন্ধআয়ের ৮০ শতাংশ এফসিএতে ট্রান্সফার করতে পারবেন বিদেশিরা