চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ১৮ তলা বিশিষ্ট আইকনিক টাওয়ারসহ ৫ টি মেগা প্রকল্প আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৫টি উপজেলার আধুনিকায়নে প্রকল্পগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। চট্টগ্রাম মহানগরে ১৮ তলা বিশিষ্ট জেলা পরিষদ টাওয়ার হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য চর্চার তীর্থ ভূমি। এ ভবনের একটি ফ্লোরে ১০ হাজার বর্গফুট স্পেস নিয়ে ইতিহাস–ঐতিহ্য কর্ণার করা হচ্ছে জেলা পরিষদের অর্থায়নে। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে ভালবাসেন বলেই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চট্টগ্রামবাসীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম অর্জন কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ করেছেন ও উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন।
বিপ্লবী চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে একাত্ম হয়ে মিশে থাকা কর্ণফুলী নদী যাকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা ও গল্প সেই নদীকে চিরস্মরণীয় করে রাখবেন প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী তথা সারা চট্টগ্রামবাসীর সামনে এখন দেশরত্ন শেখ হাসিনার দুর্বার উন্নয়ন অভিযাত্রায় সামিল হওয়ার হাতছানি। ৩.৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক বিশিষ্ট এ টানেলটি শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশ নয়, এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবে। চট্টগ্রামসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে টানেল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার জাদুস্পর্শে আজ থেকে চট্টগ্রাম মহানগরী হবে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ মহানগরী।
বঙ্গবন্ধু টানেলের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জেলা পরিষদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা যে পাঁচ মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করবেন সেগুলো হলো– ১৮ তলা বিশিষ্ট নান্দনিক জেলা পরিষদ টাওয়ার, ১০০০ আসন বিশিষ্ট পটিয়া শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানস্থ শেখ কামাল কমপ্লেক্স এবং আনোয়ারা ও রাঙ্গুনিয়াস্থ জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। জেলা পরিষদের ইতিহাসে এমনকি যেকোন স্থানীয় সরকারের ইতিহাসে এতগুলো মেগা স্থাপনা উদ্বোধনের ঘটনা এই প্রথম। নান্দনিক নির্মাণশৈলীর এবং অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১৮ তলা বিশিষ্ট জেলা পরিষদ টাওয়ারটি মূলতঃ জেলা পরিষদের অফিস কাম বাণিজ্যিক ভবন। প্রায় আড়াই লক্ষ বর্গফুটের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ১৩০০০ থেকে ১৫০০০ বর্গফুট। উঠা–নামার জন্য ৩টি সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে ৬টি দ্রুতগতি সম্পন্ন আধুনিক এমআরএল লিফট। এ ভবনের বেজমেন্টের ২টি ফ্লোর ব্যবহার হবে পার্কিং হিসেবে যাতে প্রায় ১০০টি গাড়ি পার্কিং করে রাখা যাবে, ২টি ফ্লোর ব্যবহার হবে জেলা পরিষদের অফিস হিসেবে, ১টি ফ্লোরে থাকবে ছোট–বড় ৩টি কনফারেন্স হল, চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্মারক সমূহ সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১টি ঐতিহ্য ফ্লোর রাখা হয়েছে, একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আর বাকি ১১টি ফ্লোর ভাড়া দেয়া হবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক–প্রতিষ্ঠান ও সরকারি–বেসরকারি অফিস স্পেস হিসেবে এবং টপ ফ্লোরটি ভাড়া দেয়া হবে বড় মাপের কোন আধুনিক রেস্টুরেন্টের জন্য। চুক্তিমূল্য অনুসারে এ ভবন নির্মাণে প্রাথমিকভাবে জেলা পরিষদের ব্যয় ৭৭ কোটি ১৮ লক্ষ ৪১ হাজার ২৯৭ টাকা হলেও বিভিন্ন সংযোজন ও আনুষঙ্গিক কাজসহ প্রকৃত ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা যার পুরোটাই বহন করা হচ্ছে জেলা পরিষদের নিজস্ব আয় থেকে। এছাড়া পটিয়া শেখ কামাল অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল দ্বিতল কমপ্লেক্সে ১০০০ আসন বিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটরিয়ামের পাশাপাশি থাকছে ২০০ আসন বিশিষ্ট আরও ২টি কনফারেন্স হল। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। রাউজানের নোয়াপাড়ায় শেখ কামাল তিন তলা বিশিষ্ট এ কমপ্লেক্সে ৫০০ আসন বিশিষ্ট ১টি অডিটরিয়াম, ১টি বড় পাঠাগার এবং ৮টি আবাসিক কক্ষ বিদ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭ কোটি ৩২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। আনোয়ারা ডাকবাংলোটি ১টি আধুনিক ডাকবাংলো। জরাজীর্ণ ২ তলা বিশিষ্ট এ ডাকবাংলোয় ৫টি এসি রুম, ১টি করে এসি ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম ও কমন রুম বিদ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। রাঙ্গুনিয়াতেও জরাজীর্ণ ডাকবাংলোটি ভেঙ্গে নতুন আধুনিক ডাকবাংলোটি তৈরি করা হয়েছে। এটিতেও ৫টি এসি রুম, ১টি করে এসি ড্রয়িং রুম, ডাইনিং রুম ও কমন রুম বিদ্যমান। এটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা।
জেলা পরিষদ টাওয়ারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ নির্মাণের মাধ্যমে এ অভিযাত্রায় সামিল হতে পারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের ও আনন্দের। এ গৌরব, এ অর্জন, এ সম্মান আপনার, আমার, সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর। চট্টগ্রামের এ শ্রেষ্ঠ অর্জনসমূহকে সামনে রেখে আজ ২৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সমগ্র চট্টগ্রাম উদ্ভাসিত হয়েছে বর্ণিল সাজে, সমগ্র চট্টগ্রামে এখন ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানাতে প্রস্তুত, ২৮ তারিখের শুভক্ষণকে উদযাপন করতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম জেলা পরিষদও। সত্যিকার অর্থেই আজ ২৮ তারিখ হবে বীর চট্টগ্রাম, রূপের রাজকন্যা চট্টগ্রাম, ১২ আউলিয়ার চট্টগ্রামের জন্য চিরস্মরণীয় একটি দিন। দেশের এই উন্নয়ন অভিযাত্রা অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসন উপহার দিয়ে সারা চট্টগ্রামবাসী আগামী দিনেও শেখ হাসিনাকে দেশের নেতৃত্বে আনবে ইনশাআল্লাহ। দেশের উন্নয়নের জন্য, অগ্রযাত্রার জন্য, শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার। বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে আমরা চট্টগ্রামবাসী চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকবো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা।