চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সহসভাপতিসহ ৯ পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। ওরা সবাই গতকাল রোববার চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। এর আগে সিনিয়র সহসভাপতিসহ দুজন পদত্যাগ করেছিলেন। দুয়েকদিনের মধ্যে বাকি পরিচালকেরাও পদত্যাগ করবেন।
পরিচালকদের সবাই পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে, সবার পদত্যাগ শেষে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অব ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডিটিও) কাছে পদত্যাগ করবেন। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিওর নির্দেশনা অনুযায়ী চেম্বার পরিচালিত হবে। এদিকে গত রাতে একদল মানুষ চেম্বার ভবনে গিয়ে সভাপতির পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ করেছে।
৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর চট্টগ্রাম চেম্বার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠে। বিএনপি ঘরানার ব্যবসায়ী নেতাদের নেতৃত্বে দুই দফায় চেম্বারের সামনে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা সভাপতিসহ ২৪ পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চেম্বারকে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বশীল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারকে কুক্ষিগত করে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। চেম্বার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার প্রেক্ষিতে সিনিয়র সহসভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন তরফদার রহুল আমিন। একই দিন পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর। গতকাল পদত্যাগ করেছেন সহসভাপতি রাইসা মাহবুব। এছাড়া পরিচালক আলমগীর পারভেজ, আক্তার উদ্দীন মাহমুদ, আক্তার পারভেজ, রেজাউল করিম আজাদ, ইফতেখার হোসেন, আদনানুল ইসলাম, অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ও মাহফুজুল হক শাহ পদত্যাগ করেছেন।
আজকালের মধ্যে চেম্বারের বাকি পরিচালকেরা পদত্যাগ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, চেম্বার পরিচালকদের সকলে পদত্যাগের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কেউ কেউ চট্টগ্রামে না থাকায় পদত্যাগপত্র পাঠাতে এক–দুদিন সময় লাগছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব পরিচালক পদত্যাগ করার আগে টেকনিক্যাল কারণে সভাপতি পদত্যাগ করতে পারছেন না। তিনি সকল পরিচালকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন। এরপর তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিওর কাছে পদত্যাগ করবেন। সভাপতিসহ চেম্বারের সব পরিচালক পদত্যাগ করার পর চেম্বারের ব্যাপারে ডিটিও পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে চেম্বারের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রশাসক চেম্বারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন বোর্ড গঠন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিটিও যদি মনে করেন প্রশাসক নিয়োগ না করে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কয়েকজনের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দিতে পারেন। তবে যাই করা হোক না কেন, তা পরবর্তী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়ে করা হবে বলে ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর চেম্বারে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ এবং সভাপতিসহ পরিচালকদের পদত্যাগ দাবি করে মাঠে নামা চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এসএম নুরুল হক আজাদীকে বলেন, আমরা চেম্বারের সকল পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। সেটা হতে চলেছে। এখন প্রশাসক নিয়োগ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হলে শতবর্ষী এই বাণিজ্য সংগঠন পারিবারিক সংগঠনের কলংকমুক্ত হবে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের পালস বুঝে চেম্বার পরিচালকদের পদত্যাগের বিষয়টিকে শুভ বুদ্ধি বলে মন্তব্য করেন তিনি।