করোনা যেন অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা লাভের পর কিংবা যখন থেকে দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন শুরু হয়েছে, হয়তো প্রথম দিকে বাইরের দলগুলো বাংলাদেশে আসার আগে তাদের বোর্ডের প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতেন। এইভাবে গত দশ বছরে বিশ্বের সবগুলো দল নির্বিঘ্নে বাংলাদেশ সফর করে গেছে। কখনো কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুলেনি। তবে করোনাকালীন এখনকার হিসেবনিকেষ আলাদা। এই যেমন গতকাল চট্টগ্রাম ঘুরে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের দুই কর্মকর্তা। আগামী জানুয়ারির শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। পুর্ণাঙ্গ সিরিজের খেলাসমূহ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে। করোনাকালে কিভাবে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, ম্যাচ অফিসিয়ালসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুরক্ষা দেবে বাংলাদেশ তা পরখ করে গেলেন ক্যারিবীয়ান ক্রিকেটের এই দুই কর্তা। আগেরদিন ঢাকায় ব্যস্ত সময় কাটানোর পর গতকাল চট্টগ্রাম ঘুরে গেলেন ক্রিকেট উইন্ডিজের মেডিকেল প্যানেলের সদস্য ও বোর্ড পরিচালক ড. অক্ষয় মানসিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা ম্যানেজার পল স্লোয়ি। সকালে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আসেন তারা। এরপর সেখান থেকে যান জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সেখানে প্লেয়ার্স ড্রেসিং রুম, ড্রেসিং রুম থেকে মাঠে যাওয়ার রাস্তা এ দুটোই মূলত পরখ করেন তারা। দেখে তারা বেশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
গতকাল এই দুই ক্যারিবীয়ান কর্মকর্তার ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শনের কথা থাকলেও বিসিবির কর্মকর্তারা তাদের নিয়ে গেছেন ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে। যদি কোনো ক্রিকেটারকে করোনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাহলে সে হাসপাতালের করোনা ইউনিট কতটা পারঙ্গম তা পরখ করতেই এ পরিদর্শন। তবে এই হাসপাতালের করোনা ইউনিট দেখে তারা বেশ মুগ্ধ। কারণ এই হাসপাতালের রয়েছে একেবারে আলাদা করোনা ইউনিট।
হাসপাতালের একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর এবং কোভিড ইউনিট কো-অর্ডিনেটর ডা. এ কে এম আরিফ উদ্দিন আহমেদ জানান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দুই কর্মকর্তা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের কোভিড ইউনিট দেখে দারুণ খুশি। এই দুই প্রতিনিধি দলের একজন আবার ডাক্তার। তিনি দেখেছেন সবকিছু। যেহেতু তাদের হাসপাতালের কোভিড ইউনিট একেবারেই আলাদা এবং সাধারণ রোগীদের সাথে ন্যূনতম কোনো সংযোগ কিংবা সংশ্লিষ্টতা নেই সেটাই তাদের মনে ধরেছে বেশি। তিনি জানান, যেহেতু এখনো পর্যন্ত বিসিবির সাথে তাদের কোনো কর্পোরেট চুক্তি নেই, তারপরও দেশের স্বার্থে, দেশের সুনামের জন্য বিসিবি চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে প্রস্তুত থাকবে।
এরপর ক্রিকেটারদের থাকার জায়গা হোটেল রেডিসনে আসেন কর্মকর্তারা। সেখানে আইসোলেশন ফ্লোর, ক্রিকেটারদের জন্য আলাদাভাবে নির্ধারণ করা ফ্লোরসহ জিম, সুইমিংপুল, ডাইনিং কক্ষ সব পরখ করেন। সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ করেন অনুশীলনের মাঠ এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের ভেতর-বাহির।
বিসিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে সন্তুষ্টি নিয়েই ঢাকায় ফিরে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দুই কর্মকর্তা। এখন উদগ্রীব অপেক্ষা কেবল সিরিজ শুরুর। কারণ করোনা শুরু থেকে এটাই হবে কোনো দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই কর্মকর্তার সাথে ছিলেন বিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান ডা. দেবাশীষ চৌধুরী, বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার সাব্বির খান, লজিস্টিক এবং প্রটোকল বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার কাউসার আজম সজিব এবং জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল।