চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমারের স্ত্রী শিল্পী রানী সরকারের ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৯ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। চাকরি এবং ব্যবসার আয় থেকে এসব সম্পদ গড়ার দাবি করলেও দুদকের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে যে, তিনি তার সরকারি চাকরিজীবী স্বামীর অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়েই মূলত বিপুল অংকের উক্ত সম্পদ অর্জন করেছেন। তার চাকরি এবং ব্যবসার দাবিটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেছে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে উত্তম কুমারেরও জ্ঞাত আয়ের উৎস বর্হির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তার মোট জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৯০৫ টাকার। যদিও তা তার স্ত্রী শিল্পী রানী সরকারের তুলনায় অনেকটা–ই কম। সরকারি চাকরিজীবী ও তার স্ত্রী মিলে প্রায় কোটি টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এ ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলা দুটি দায়ের করেন একই কার্যালয়ের উপ–সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
দুদক জানায়, জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য–প্রমাণ পাওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমারের স্ত্রী শিল্পী রানী সরকারকে তার স্থাবর ও অবস্থাবর সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। এরই প্রেক্ষিতে তিনি গত ২০২৩ সালের শেষের দিকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি নিজ নামে ১ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ও ২০ লাখ ৮২ হাজার ১৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ১৮৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য দেন। পাশাপাশি তিনি ঘোষণা দেন যে, তার ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪৪ টাকা ঋণ বা দায়–দেনা রয়েছে। যাচাই করলে দেখা যায়, তিনি ১ কোটি ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৭২৩ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৯ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৭০২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। দায়–দেনার তথ্য পাওয়া গেছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৬৫ টাকার। এই দায়–দেনা বাদ দিলে তার নীট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৭ টাকার। দুদক জানায়, ২০২৩–২৪ করবর্ষ পর্যন্ত শিল্পী রানী সরকারের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৪১ লাখ ৬ হাজার ২১২ টাকা এবং এ সময়ে পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট ব্যয় পাওয়া গেছে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৫৩৪ টাকা। গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস থেকে পারিবারিক ব্যয় বাদ দিলে তার নীট আয় বা সম্পদ ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৭৮ টাকায় এসে দাঁড়ায়। সেই হিসাবে তার নীট সম্পদ তথা ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৭ টাকার সম্পদের মধ্যে ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৯ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। বিপুল অংকের এ সম্পদ তিনি তার চাকরিজীবী স্বামী উত্তম কুমারের অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে গড়েছেন।
শিল্পী রানী সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, আয়কর নথিতে তিনি চাকরি ও ব্যবসা থেকে আয়ের কথা বলেছেন। অথচ এসবের পুরোটায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, উত্তম কুমারের নামে মোট ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৯০৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদের মালিকানা অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন। যা দুর্নীতি কমিশন আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপ–পরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে মামলার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমারের বাড়ি নাটোর জেলার লালপুর থানার আব্দুলপুর এলাকায়। বর্তমানে তিনি সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।










