উত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে ব্যস্ততম যোগাযোগ মাধ্যম হল চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক। কিন্তু নানা কারণে ব্যস্ততম এই সড়ক বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠছে। সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা, বাড়তি গাড়ির চাপ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বাঁক সড়কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিশৃঙ্খল সড়কে পরিণত করেছে। এতে নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা, ব্যাপক যানজটে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছেন যাত্রীরা। শৃঙ্খলা ফেরাতে সড়ক প্রশস্তকরণসহ অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে কঠোর মনিটরিংয়ের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। নিয়মিত এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। সর্বশেষ গত সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে বেপরোয়া শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে প্রাণ হারিয়েছেন বাইক আরোহী কাজল সাহা ও তৌফিক হোসাইন নামে চুয়েটের দুই শিক্ষার্থী। এতে গুরুতর আহত হন চুয়েটের অপর শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু। এই ঘটনায় গেল দুদিন ধরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এরআগে গত মাসের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী আপন ক্লাবের সামনে পিকআপের ধাক্কায় নিহত হন অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ আবদুল হান্নান (৩৪)। আহত হন আরো তিন শিক্ষার্থী। এভাবে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কে ২০২৩ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন ১৫ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী।
সরেজমিনে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কের তাপবিদ্যুৎ গেট থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে রাঙ্গুনিয়া অংশ। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করেন। দিন দিন সড়কে বাড়তি গাড়ির চাপসহ নানা কারণে সড়কের বিশৃক্সখল পরিস্থিতি ক্রমে লাগামহীন হয়ে পড়ছে।
সড়কের এই বিশৃক্সখল পরিস্থিতির জন্য দিন দিন দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ফুটপাত দখল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী উঠানামা করানো, সড়কের উপর বাজার, যেমন খুশি তেমন স্টাইলে গাড়ি চালানো, ফিটনেস ও নম্বরবিহীন যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক সিস্টেমের অভাব, ঘুষ বাণিজ্য, সাধারণ মানুষের সদিচ্ছা, টার্মিনালের অভাব, আইন না মানার মানসিকতা সহ নানা কারণে কাপ্তাই সড়কে শৃক্সখলা নেই বলে মনে করছেন সচেতনমহল। এই নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফুটপাত দখল মুক্ত করা হলেও তা আবারও দখল করে নেওয়া হচ্ছে। এতে সড়ক জুড়ে তীব্র যানজট, নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা সহ নিত্য দুর্ভোগ লেগেই রয়েছে।
রোয়াজারহাট বাজারে আসা হুমায়ন কবির বলেন, এলোমেলোভাবে গাড়ি রাখা ও সড়কের উপর গাড়ি রেখে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে দিনভর রোয়াজারহাটে যানজট লেগেই থাকে। কিন্তু এটি দেখার জন্য যেন কেউ নেই। আবু আহম্মেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান, বুইজ্জার দোকান, চারাবটতল, মরিয়মনগর, পারুয়া ও গোডাউন ব্রিজ দিয়ে কাঠবোঝাই দ্রুতগামী চাঁদের গাড়ির বেপরোয়া চালকদের কারণে কিছুদিন পরপরই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু এরপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নেতা শাহ আলম চৌধুরী বলেন, বাঁকগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাঁকগুলোতে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড ও স্বচ্ছ আয়না স্থাপন করা প্রয়োজন। বাঁকগুলো সংস্কার করলে দুর্ঘটনা কমবে।
বাস মালিক সমিতির নেতা রাসেল চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সড়কে শৃক্সখলা ফেরাতে আগামী এক মাস মাঠে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এছাড়া আগামী এক মাসের মধ্যে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজও শুরু হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।সড়কে তীব্র যানজট ও দুর্ঘটনার বিষয়ে সমপ্রতি উপজেলার মাসিক আইনশৃক্সখলা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধিরা। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, সড়কে শৃক্সখলা ফেরাতে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে এখন থেকে মাঠে থাকবে।