চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে বাড়ছে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম

নজরদারিতে সমমনা দলগুলোর ২৫ নেতা

ঋত্বিক নয়ন | বুধবার , ৩ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

প্রকাশ্যে ‘দাওয়াতি’ কাজের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। সংগঠনটি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম জোরদার করেছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা চলে যাওয়ার পর তালেবান যে তৎপরতা শুরু করেছে তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে সংগঠনটি।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের কারণে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম প্রায় স্থিমিত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, তারা সুকৌশলে মাদ্রাসা ছাত্রদের টার্গেট করে জঙ্গি আদর্শে অনুপ্রাণিত করছে। তারা কৌশল হিসেবে আনসার আল ইসলামের আড়ালে ‘শাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি করে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কার্যক্রম বাড়িয়েছে আনসার আল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে কাট আউট সিস্টেমে সীমান্ত এলাকায় সদস্য বাড়াচ্ছে। এভাবে সদস্য বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকাশ্যে দাওয়াতি কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে দেশে জঙ্গি তৎপরতা ও উগ্র ইসলামী সংগঠন বিবেচনায় সাতটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হলো। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ব্লগার, লেখক, প্রকাশক এবং ভিন্ন মতাদর্শের মানুষের ওপর আক্রমণ পরিচালনাকারী জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করার পর দলটির সদস্যরাই আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালিয়ে আসছে বলে আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর ধারণা। এই ধরনের সংগঠনগুলো গোপনীয়তা বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করে, বিভিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করে এবং নতুন কর্মী রিক্রুট করে। সদস্যদের প্রশিক্ষণও হয় গোপনে। এরপর কর্মীরা কেউ সামরিক দায়িত্ব নেওয়া, কেউ যোগাযোগ, কেউ অর্থের যোগান এবং কর্মীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। পুরো কাজটাই হয় গোপনে।

জঙ্গি সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নজরদারিতে যুক্ত আইনণ্ডৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সমমনা ইসলামী দলগুলোর অন্তত ২৫ জন নেতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। এসব নেতা আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করছেন। তারা জঙ্গি সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী বোর্ড শরিয়া বা ফতোয়া বোর্ডের সদস্য। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে বেশি কৌশলী ও গুছিয়ে কাজ করে আনসার আল ইসলাম।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, আনসার আল ইসলামের নামে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যাহত হচ্ছে। তাই কার্যক্রম চলমান রাখতে আনসার আল ইসলাম মতাদর্শী ‘আসশাহাদাত’ নামে নতুন একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি করে নতুন সদস্য সংগ্রহসহ দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এই গ্রুপটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ৮৫১০০ জন। এই গ্রুপটির উদ্ভাবক হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক হাবিবুল্লাহ এবং কথিত আমির সালাহউদ্দিন।

২৭ জুন রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব১৫ এবং র‌্যাব৭ এর যৌথ দল কঙবাজারের চৌফলদন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১০টি উগ্রবাদী বই, ২৯টি লিফলেট ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম। এর আগে ২৩ মে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকা থেকে এই গ্রুপের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে তাদের নেতৃস্থানীয় অনেক সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। তাই এই সংগঠনটিকে তারা পুনরুজ্জীবিত করতে নতুন রিক্রুটিং করছে। অপব্যাখ্যা দিয়ে উঠতি বয়সী কিশোরদের সহজে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে ভুল পথে নেওয়া যায়। তাই তারা কোমলমতি কিশোরদের টার্গেট করে কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় চিংড়ি জোনের আতঙ্ক ‘বেলাল বাহিনী’ প্রধান গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধদশ দিন পর বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া