সুয়্যারেজ সিস্টেমের বিষয়ে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে। দৈনিক আজাদীতে গত ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা পুরো নগরীকে ছয়ভাগে ভাগ করে প্রথম পর্যায়ে অন্তত বিশ লাখ মানুষকে সুয়্যারেজ সিস্টেমের আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। পুরো প্রকল্পের কাজকে তিনভাগে বিভক্ত করে আহ্বান করা হয়েছে টেন্ডার। আগামী দিন কয়েকের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে। হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমির উপর দুইটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন এবং ১৮০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুয়্যারেজসিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ‘সুয়্যারেজে ঢাকা থেকে ১০৩ বছর পিছিয়ে চট্টগ্রাম। ঢাকা ওয়াসা ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ঢাকায় সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু হয় ১৯২৩ সালে। ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তারা এই সুয়্যারেজ প্রকল্প চালু করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে ব্যাপকহারে সুয়্যারেজ সিস্টেম চালু করে ঢাকা ওয়াসা। এখন পর্যন্ত ঢাকার ২০ শতাংশ এলাকা সুয়্যারেজের আওতায় এসেছে। কিন্তু দেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী চট্টগ্রামে ১৯৬৩ সালে ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ ৫৭ বছর সুয়্যারেজ নিয়ে অন্ধকারেই ছিল চট্টগ্রাম।’
চট্টগ্রাম মহানগরীতে সুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সমস্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। কোনো প্রকার পরিশোধন ছাড়াই মল-মূত্রসহ পয়:বর্জ্য খোলা নালা-নর্দমা, খাল ও ছড়া হয়ে নদীতে পড়ছে। এতে করে নগরীর পরিবেশও মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। সড়ক, হাটবাজার ও গৃহস্থালির আবর্জনা বা কঠিন বর্জ্যসংগ্রহ করে নির্দিষ্ট এলাকায় ডাম্পিং করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে করে নগরী কিছুটা পরিচ্ছন্ন হলেও পয়:বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মহানগরীর বিভিন্ন বাসা বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক থাকলেও মূলত এক পর্যায়ে বর্জ্য চলে আসে নালায়, যা এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে। তাছাড়া শহরে ২০ হাজারেরও বেশি বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের অন্তত অর্ধেক সেপটিক ট্যাংকের নিচে ফুটো রয়েছে। যেখান দিয়ে বর্জ্য অনায়াসে ভবনের পাশের ড্রেনে এসে পড়ে। এই অবস্থার অবসানে নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের সুয়্যারেজ ব্যবস্থা না থাকাতে নদী ও খাল দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিছু ক্ষেত্রে সুয়্যারেজের লাইনের সাথে পানির লাইন এক হয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। বস্তি ও প্রান্তিক বহু এলাকায় সুয়্যারেজ এর চরম ঘাটতি ও পানির অপ্রাপ্যতার সমস্যা বিদ্যমান। দেশের সকল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিশেষত দুর্গম উপকূলীয় অঞ্চল, চর, হাওর, পাহাড়ি এলাকা, শহরের বস্তিবাসী, দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ নিম্ন আয়ের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীদের প্রতি বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুতগতিতে সবাইকে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনতে হবে। ২০৩০ এর মধ্যে এসডিজি অর্জনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের গুণ ও পরিমাণগত মান নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। ওয়াসার পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও পাইপ নেটওয়ার্কও খতিয়ে দেখা জরুরি। সিটি করপোরেশনের এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীকে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন এবং ড্রেনেজ সেবা প্রদানে ওয়াসা’র সীমিত সম্পদ ও প্রযুক্তি সত্ত্বেও অদম্য প্রচেষ্টা চলমান। তবুও আরো মনিটরিং পূর্বক সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিতে ওয়াসাকে প্রাগ্রসর ভূমিকা রাখতে হবে। নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন খাতে অর্থায়ন ঘাটতি কমিয়ে আনাও জরুরি। সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ অপরিহার্য।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ্ বলেন, আমরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদার নিয়োগ করবো। বহু প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামকে হেলদি সিটিতে রূপান্তরে সুয়্যারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। আমরা এখন সেই সুয়্যারেজ সিস্টেম গড়ে তোলার একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। আগামী ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিছুটা বাড়তি সময় লাগবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
একটি আধুনিক ও হেলদি সিটির জন্য সুপেয় পানি ও আধুনিক স্যানিটেশন ব্যবস্থা অপরিহার্য। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রাম নগরীর জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা অগ্রগামী হলেও স্যানিটেশনে পিছিয়ে। সেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য সুয়্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যক।