ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলায় ৫ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র, ১৪শ ৪০টি বিদ্যালয় ও ৯টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে চার লাখ মানুষকে আশ্রয়ণ করা যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় নিরাপদে সরে যেতে পুরো চট্টগ্রামজুড়ে চলমান রয়েছে মাইকিং কার্যক্রম। ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজও শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ গতকাল রাত ১০টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সন্দ্বীপ-বাঁশখালীসহ ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ হাজার লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সন্দ্বীপে ৭ হাজার, বাঁশখালীতে ৩ হাজার, সীতাকুণ্ডে ৩ হাজার, মীরসরাইয়ে আড়াই হাজার ও আনোয়ারায় ২ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া নগরীর পতেঙ্গা ও কাট্টলী মৎসজীবী পল্লী এলাকা থেকেও আড়াই হাজার মানুষ নিরাপদ জায়গায় (আত্মীয় স্বজনের বাসা) অবস্থান করছেন। দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রামে ১৪হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান আজাদীকে এসব তথ্য জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ২০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরানো হয়েছে। চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা না থাকলেও আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। যেকোনো সময় অবস্থা বুঝে পাহাড়ের পাদদেশ থেকেও লোকজনকে সরিয়ে নিব। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে খাবার, ওষুধ মজুদ করা হয়েছে। ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত নগরবাসীর জন্য পৃথক ১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
এদিকে গতকাল দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায়ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। সভায় জানানো হয়, দুর্যোগকালীন জরুরি সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি জরুরি সেবা সেল চালু করা হয়েছে। যেকোন প্রয়োজনে যে কেউ জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০১৭০০-৭১৬৬৯১) যোগাযোগ করতে পারবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছেও সাহায্য চাওয়া যাবে। সাগরের তীরবর্তী উপজেলা সমূহে প্রস্তুতকৃত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দ্রুত শুকনো খাবার ও ওষুধ প্রেরণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগকালীন যে কোনো ধরনের ব্যয় নির্বাহ করবে জেলা প্রশাসন। জরুরি ভিত্তিতে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে যেতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতারকে নিয়মিত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর বুলেটিন বার্তা প্রচার অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য কোস্টগার্ডকে তাদের বোট গুলো নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাসমূহ নিরাপদ অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি তদারকি করতে বলা হয়েছে। দুর্যোগে হতাহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজন সাপেক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে জরুরি ত্রাণ ও সহায়তার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলেও সভায় জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দুর্যোগ মোকাবেলায় ও মানুষের জান মাল রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি সকল দপ্তরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ জন্য সব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী আজাদীকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা, শুকনো খাবার ১০০০ প্যাকেট, বিস্কুট ৭০০ কার্টুন, ৫০০ কার্টুন কেক দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।