চালের দাম যৌক্তিক পর্যায় রাখতে বস্তায় ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম লেখা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। এই নির্দেশনা ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে বলেছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু চট্টগ্রামে ৫ মাসেও সরকারের দেওয়া এই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি।
ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ কৌশল গ্রহণ করে সরাসরি বস্তায় ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম না লিখে আলাদা করে কার্ডে লিখে দিচ্ছেন। রাইস মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে চালের দাম ওঠানামা করায় বস্তার গায়ে মিল গেটে চালের দাম ও উৎপাদন তারিখ লেখা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত কোথাও কার্যকর হয়নি বলে জানান চট্টগ্রাম রাইচ মিল মালিক সমিতির নেতারা।
গত কয়েকদিন চট্টগ্রামের চাক্তাইয়ের বেশ কয়েকটি রাইস মিল এবং চালের পাইকারি গুদাম এবং চালের পাইকারি বাজার পাহাড়তলীতে ঘুরে কোথাও চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেটে চালের দাম লেখা দেখতে পাওয়া যায়নি। মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে চালের দাম ওঠানামা করায় বস্তায় মূল্য লিখতে পারছেন না। দেশের কোথাও এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা আসলেই সম্ভব নয়।
তবে অনেক দোকানদার জানান, বস্তায় মূল্য লেখা থাকলে তাদেরও সুবিধা হয়। কাস্টমারের সঙ্গে বেশি কথা বলতে হয় না।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে গেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তাগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য চালের মূল্য সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাত করা হয় তা নিশ্চিত এবং মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে চাল উৎপাদনকারী মিলারগণ গুদাম থেকে বাণিজ্যিকভাবে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার উপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেটে ধান ও চালের জাতের নাম লেখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
এ ব্যাপারে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছিল। পরিপত্রের নতুন এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদশকগণকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর চট্টগ্রামে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ অফিসের সকল কর্মকর্তা, চাক্তাই–খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের সকল চাল ব্যবসায়ী, চট্টগ্রামের সকল চাল কল মালিক সমিতির সদস্য ও পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মিটিং করেছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। বৈঠকে রাইস মিল মালিক সমিতির নেতারা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও গত ৫ মাসেও তা বাস্তবায়ন করেননি।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আজাদীকে বলেন, সরকার একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ১৪ এপ্রিল থেকে প্রতিটি চালের বস্তায় মিল মালিকদের ‘ধানের জাতের নাম, প্রস্তুতকারক (কোন মিল থেকে বস্তাজাত করা হয়েছে), নিট ওজন, মিল গেট মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, ঠিকানা (উপজেলা ও জেলা)’ প্রিন্ট করে বস্তার গায়ে লাগিয়ে দিতে আমাদেরকে বলেছিল। এটা বাস্তবায়ন করা আসলেই সম্ভব না। এখনো কেউ করেননি। চট্টগ্রামে আমাদের যে মিলগুলো আছে সেগুলোতে তেমন উৎপাদন নেই। এখানে বেশিরভাগ বাইরের জেলা থেকে চাল আসে। যেমন দিনাজপুর, বগুড়া, নবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও আশুগঞ্জ থেকে চাল আসে। সেখানেও সরকারি এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।
তিনি বলেন, সরকারি এই সিদ্ধান্ত মানতে গেলে সমস্যাও হবে। যেমন দিনাজপুর, বগুড়া নবাবগঞ্জ ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৫ কেজি একটি চালের বস্তা চট্টগ্রামে আসলে সেটার গায়ে দাম লেখা থাকবে ১৭০০ টাকা। দিনাজপুর, রাজশাহী থেকে এই চালের বস্তা চট্টগ্রাম আসতে খরচ পড়বে ১০০ টাকা, টেকনাফে যেতে আরো ১০০ টাকা খরচ পড়বে। তখন ১৭০০ টাকার ২৫ কেজি চালের বস্তাটি চট্টগ্রামে দোকানদারকে বিক্রি করতে হবে ১৮০০ টাকায় এবং টেকনাফের ব্যবসায়ীকে বিক্রি করতে হবে সাড়ে ১৮শ বা ১৯০০ টাকায়। তখন ক্রেতা বস্তার গায়ে লেখা থাকা ১৭০০ টাকার চাল ১৮শ বা ১৯শ টাকা কেন বিক্রি করা হচ্ছে তা জানতে চাইবে। তিনি বলেন, এটি করার হয়তো একটি উদ্দেশ্য আছে, সেটি হচ্ছে কেউ যাতে মজুদদারী করতে না পারে।