চট্টগ্রামে ৫৮ হাজার ৫শ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া এবং জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম নগর এবং উপকূলীয় উপজেলার ৬৬টি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৭৬০টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৫৭২ জন। এ তথ্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। কেবল নগরের পতেঙ্গাতেই কয়েকশ ঘর তলিয়ে গেছে জোয়ারে পানিতে।
এদিকে নগরের চান্দগাঁও মোহরায় মোবারক হোসেন নামে একজন মারা গেছেন। এছাড়া সীতাকুণ্ডে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে এক শিশুর লাশ। মীরসরাইয়ে বঙ্গোপসাগরে বালুর ড্রেজার ডুবে ৮ জন নিখোঁজ হওয়ার পর এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। উপজেলায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লোকালয় এবং ফসলি জমি, লবণ মাঠ ও মাছের ঘের। নগরের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ অনেক নিচু এলাকাও তলিয়ে গেছে সোমবার রাতে। সব মিলিয়ে প্রাণহানি কম হলেও কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে চট্টগ্রামে। এদিকে সীতাকুণ্ডে জোয়ারের পানিতে সন্দ্বীপের চরাঞ্চল থেকে ভেসে আসে কয়েকশ মহিষ।
আবহাওয়া অফিস জানায়, মাঝারি মাত্রার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে সোমবার রাত ৯টার দিকে। ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল করে এ ঘূর্ণিঝড়। এ সময় প্রবল ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। এর আগে আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি লঘুচাপ আকারে সৃষ্টি হয়েছিল ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায়। সেটি ধীরে ধীরে ২১ অক্টোবর দুপুর ১২টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। ২২ অক্টোবর নিম্নচাপ ও ২৩ অক্টোবর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে পরিণত হয়। এ ঝড়ের ব্যাস ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার।
চান্দগাঁওয়ে প্রাণহানি : সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাড়তে থাকা জোয়ারের পানি সোমবার রাত আড়াইটার দিকে ঢুকে যায় মোহরা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে। ওই এলাকার মৃত নুর আলমের বাসায়ও পানি ঢোকে। এ সময় সবাই ঘরের আসবাবপত্র সরানোর চেষ্টা করছিল। হঠাৎ পানিতে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়লে মোবারকসহ তাদের ঘরের চারজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোবারককে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আহত হন মোবারকের ভাই মো. সালাউদ্দিন, তার স্ত্রী রাশেদা বেগম ও ছোট ভাই মো. সাদ্দাম। এর মধ্যে সাদ্দামকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকি দুজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৫৮ হজার ৫৭২ জন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব চক্রবতী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৮০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ২১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৩ লাখ ৮০ হাজার নগদ অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পতেঙ্গায় জেলেপল্লীতে ২ মেট্রিক টন চাল এবং ভিজিএফ কার্ডের চাল আগামীকাল (আজ) বিতরণ করা হবে।
এদিকে সোমবার রাতে জোয়ারের পানিতে পাথরঘাটা আশরাফ আলী সড়ক, বাকলিয়া, ডিসি রোড, বাড়ইপাড়া, চকবাজার, চান্দগাঁও, নিমতলা, মাইজপাড়া, হালিশহরের পুরনো ডাকঘর, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় কোমর সমান পানি ছিল। পানিবন্দী এলাকার লোকজনের নির্ঘুম রাত কেটেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে ড্রেজার ডুবে ৮ শ্রমিক নিখোঁজ
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ স্বামী পলাতক