চট্টগ্রামে ২৫ ও ২৬ মার্চ হত্যাকাণ্ড চালায় জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

| মঙ্গলবার , ৯ মার্চ, ২০২১ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মর্মার্থ বিএনপির না বোঝাটাই স্বাভাবিক। কারণ, অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণাকারীর এই দলটি বরাবরই পরাজিত শক্তির আজ্ঞাবহ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর পক্ষে গণহত্যা শুরু করেছিল, পাকিস্তানী জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে যাচ্ছিল এবং যে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী হিসেবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতায় বসে অবৈধভাবে দল গঠন করেছে, সেই দলের নেতারা ৭ মার্চের ভাষণের মর্ম বুঝবে না এটাইতো খুব স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘এতে যেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই। তেমনি এদের নিয়ে আলোচনা করারও কিছু নেই। ধরেই নিতে হবে এরা এখনও সেই পুরনো প্রভুদের ভুলতে পারেনি। তাদের পালিত দল হিসেইে তারা আছে, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’ তিনি ক্ষোভের সংগে এ সম্পর্কে আরো বলেন, ‘পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী যা বোঝে এরাও তাই বোঝে তবে, বাঙালি যা বোঝে তারা তা বোঝে না।’ খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্বকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভেনিউতে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে তারা কিছুই দেখে না, কিছুই বোঝে না, কিছুই খুঁজেও পায় না। তারা না-ই পেতে পারে, তবে, হঠাৎ আমরা দেখলাম তারা ৭ মার্চের দিবসটি উদযাপন করতে যাচ্ছে (বিএনপি)। অথচ এই ভাষণে নাকি তারা কিছুই খুঁজে পায়নি। তবে, ভাষণটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জায়গা করে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, তারা (তিনি এবং শেখ রেহানা) ৭ মার্চের ভাষণের সময় স্টেজের পাশেই ছিলেন এবং ভাষণ শেষে যাওয়ার সময় উৎফুল্ল জনতা ফুলার রোডে তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরে তাদের মুখে শ্লোগান ছিল ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন করো। মানুষ যেন (খুশীতে) খৈ-এর মত তখন ফুটছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য আর সেদিনের সেই ব্যক্তি বিশেষের উক্তি দেখে মনে হয়, তারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কোন দালালী নিয়ে ছিল। যারা এখনও সেই দালালি ভুলতে পারেনি। সেইজন্যেই তারা ‘কিন্তু’ খোঁজে।
বিএনপি’র সেই ‘কিন্তু’ খোঁজা সম্পর্কে তিনি তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের সার্বিক ভূমিকার উল্লেখ করে বলেন, ‘২৫ মার্চ চট্টগ্রামে যারা ব্যারিকেড দিচ্ছিল তাদের অনেককে জিয়াউর রহমান গুলি করে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, জিয়া ২৫ ও ২৬ মার্চ দুই দিনই হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৭ তারিখ সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে গিয়েছিল জিয়া। সে যাতে অস্ত্র নামাতে না পারে, আমাদের স্বাধীনতাকামীরা তাকে আটকায়।’ চট্টগ্রামে সে সময় অবস্থানকারী যাদের অনেকেই এখনও দেশে-বিদেশে রয়েছেন তাদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ তারিখ প্রথম প্রহরেই জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআরএর ওয়্যারলেস যোগে সারাদেশে প্রচার করা হয়।
পরে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করায় একজন সেনা কর্মকর্তা প্রয়োজন পড়ায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যদিও মেজর রফিককে প্রথম অনুরোধ করা হয়েছিল তিনি অ্যামবুশ করে বসে থাকায় জিয়াকে দিয়েই ঘোষণা পত্র পাঠ করানো হয়। যা দিনভর সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীরাই প্রচার করেছে।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, ‘সে (জিয়াউর রহমান) তো আগাগোড়া পাকিস্তানের দালালি করে আসছে। তার জন্মও সেখানে। লেখাপড়াও ওখানে। সে কবে বাংলাদেশের হলো? তিনি আরো বলেন, চাকরি সূত্রে বাংলাদেশে এসেছে। সে সূত্রে বিবাহ করে পরবর্তীতে থেকে যায়। এটাই তো বাস্তবতা। তারপরও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে তাদেরকে সম্মান দেয়া হয়েছে। কিন্তু, এদের চরিত্র তো বদলায়নি। ঠিকই বেঈমানি-মুনাফেকি করেছে।
‘সে-ই এই হত্যাকাণ্ডের (১৫ আগস্ট) মূলহোতা ছিল এবং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। যারা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে জড়িত, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করে, দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, এ দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তাদের তৈরি করা রাজনৈতিক দল থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী আশা করবে?’ বলেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোগীর সাথে দুর্ব্যবহার ও টাকা নেয়ার অভিযোগে ৩ কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ
পরবর্তী নিবন্ধ৮ সপ্তাহ পর ফের ৮শ ছাড়াল দৈনিক শনাক্ত রোগী