চট্টগ্রামে হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমণের হার ৪ শতাংশ

টিকাগ্রহণ ও সচেতনতার ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস

জাহেদুল কবির | সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:২৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ। ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। এরপর থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নানা আয়োজনে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়।

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিসবি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে ২৮ জুলাই তার জন্মদিনে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো– ‘আসুন, হেপাটাইটিস রুখে দেই ’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিভারের যেকোনো ধরনের প্রদাহকে হেপাটাইটিস বলে। আর এই প্রদাহ যদি নির্দিষ্ট ভাইরাসজনিত কারণে হয় তবে তাকে বলা হয় ভাইরাল হেপাটাইটিস। হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ইএই পাঁচটি ভাইরাসই মূলত: ভাইরাল হেপাটাইটিসের জন্য দায়ী। বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৩২ কোটি লোক হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্ত। অথচ তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ অর্থাৎ আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই নিজের শরীরে এই রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে জানেন না। সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩ লাখ লোক ভাইরাল হেপাটাইটিসে মারা যায়। লিভার ক্যান্সারে মারা যাওয়া প্রতি ৩ জনের ২ জনই হেপাটাইটিস ‘বি’ বা ‘সি’ তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আমাদের দেশের শতকরা প্রায় ৫ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিসবি ভাইরাসের বাহক। তাদের কারো কারো বিভিন্ন সময়ে লিভারে জটিল রোগ হচ্ছে। এ দেশের প্রায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ গর্ভবতী মায়েরা হেপাটাইটিসবি ভাইরাসে আক্রান্ত। এই ভাইরাস তাদের নবজাতকের শরীরে সংক্রামিত হতে পারে। বাংলাদেশের শতকরা ১ ভাগ লোক হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বাহক। যাদের অধিকাংশই জানেন না তারা এই রোগে ভুগছেন। হেপাটাইটিসবি ও সি ভাইরাসজনিত হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগেরই কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে না। সাধারণত শারীরিক চেকআপ, বিদেশ যাত্রা কিংবা অপারেশনের পূর্বের চেক আপ করানোর সময় এটি ধরা পড়ে। কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো হলোঅবসাদ, ক্ষুধামন্দা, জ্বরজ্বর ভাব, শরীর শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

সঠিক ও সময়মত চিকিৎসা না করা হলে দীর্ঘদিন রোগভোগের কোনো এক পর্যায়ে হেপাটাইটিসবি ও সি রোগীদের সিরোসিস, পেটে বা পায়ে পানি আসা, রক্তবমি এমনকি প্রাণঘাতী লিভার ক্যান্সারের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লিভার কেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিভার কেয়ার সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি গবেষণামতে চট্টগ্রামে হেপাটাইটিস বি সংক্রমণের হার প্রায় ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল থেকে সরকারের ইপিআই কর্মসূচির আওতায় শিশুদের হেপাটাইটিস বি রোগের টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু হওয়ায় সংক্রমণের হার নিম্নগামী। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মাঝে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। তাই চট্টগ্রামে বিভিন্ন কারণে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে চট্টগ্রামের জনসাধারণের মাঝে হেপাটাইটিস সি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। হেপাটাইটিস নির্মূলে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে রক্ত পরীক্ষা এবং ওষুধ সরবরাহ করা দরকার। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক এবং চাকুরির ক্ষেত্রে সবধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। এছাড়া নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে একবার ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও সুঁচ পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। শিরাপথে মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। শরীরে রক্ত গ্রহণের পূর্বে রক্তদাতার রক্ত সঠিক ও নিশ্চিতভাবে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। গর্ভবতী মহিলাদের রক্তে হেপাটাইটিস বি ও সি পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে গর্ভাবস্থায় নিরাপদ ওষুধ সেবন করতে হবে। হেপাটাইটিস বি পজিটিভ মায়ের সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে সন্তানকে টিকা দিতে হবে। দাঁতের চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। মদ পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেলুনে দাড়ি কামালে ডিসপোজিবল ব্লেড ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নাক/কান ফোঁড়ানোর সময় জীবাণুমুক্ত সুঁচ ব্যবহারে নিশ্চিত হতে হবে। হেপাটাইটিস এ ও বি রোগের ভ্যাকসিন/টিকা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঐকমত্য হয়েছে ১২টি সংস্কার প্রশ্নে : আলী রীয়াজ
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক বিমান বাহিনী প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা