নগরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির পৃথক দুটি গায়েবানা জানাজা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বিকেলে লালদীঘি ময়দানে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র–জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত জানাজা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোক এ জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে বের হয় একটি বিক্ষোভ মিছিল। নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে শেষ হয় মিছিল। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘আমরা সবাই হাদি হব’ বলে স্লোগান দেন। এর আগে দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ‘অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট স্কোয়াড’র উদ্যোগেও একটি গায়েবানা জানাজা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যায় বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে ‘ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী অগ্রনায়ক ও জুলাইয়ের কণ্ঠস্বর শরীফ ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে’ মশাল মিছিল করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), যুবশক্তি, শ্রমিক শক্তি ও ছাত্রশক্তি। জানাজা ও মিছিল থেকে হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
এদিকে লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন কল্পোলোক আবাসিক জামে মসজিদের খতিব ইমরানুল হক সায়েম। জানাজা শুরুর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন– বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক জুবায়েরুল ইসলাম মানিক, ইবনে ওমর যায়েদ ও জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ইবনে হাসান জিয়াদ।
ইবনে ওমর যায়েদ বলেন, আজকের এই জানাজা থেকে আমরা একটি বার্তা দিতে চাই। আমাদের হাদি ভাইয়ের লড়াই ছিল সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। আমাদের হাদি ভাইয়ের লড়াই ছিল ইনসাফের পক্ষে। ইবনে হাসান জিয়াদ বলেন, আমাদের হাদি ভাইয়ের যে দাবি রয়েছে, শহিদ হাদি ভাইয়ের আদর্শকে ধারণ করে আমরা সরকারের কাছে সেই দাবিগুলো উত্থাপন করব।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন জুলাইয়ের শহীদ মাহবুবুল হকের ছোট ভাই মঞ্জু মাহিম। অংশ নেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র–জনতা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট স্কোয়াড এর সংগঠক রিয়াজুল আনোয়ার সিন্টু, আযাদ দোভাষ, সরওয়ার কামাল, টিপু সুলতান, এমদাদুল হক, নাঈমুর রহমান তানজিদ, সৈয়দ এহসানুল হক, নিজামুদ্দিন ও সাকিব। জানাজা থেকে হাদির হত্যাকারীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট স্কোয়াডের মুখপাত্র রিদুয়ান হৃদয় সমবেতদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাদির হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় না আনা হয়, আরও বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট স্কোয়াডের আরেক সংগঠক রাকিবুল হাসান নওশাদ হাদির নিরাপত্তাহীনতা ও নির্মম হত্যাকাণ্ডে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে আমাদের চবি প্রতিনিধি জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার জোহরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে চাকসুর উদ্যোগে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. আবদুল কাদের। চাকসুর জিএস সাঈদ বিন হাবিবের সঞ্চালনায় গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি প্রমুখ।
এছাড়া গতকাল শনিবার বাদ পতেঙ্গার কাটগড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক শহিদ হাদির গায়েবানা নামাজে সর্বস্তরের মানুষে ঢল নামে। এতে অংশ নেয় পতেঙ্গার সর্বস্তরের ছাত্র–জনতা। এছাড়া রাউজান, সাতকানিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
