হাজার বছর ধরে পথ হাঁটিতেছি : ইতিহাসবিদ ড. আবদুল করিম বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম শুধু শহর নয়, এটি একটি বন্দর শহর। এই শহরের উন্নতি অবনতি বন্দরের সমৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায় দশ হাজার বছর আগের নব্য প্রস্তর যুগে চট্টগ্রামের বসতি ছিল।’ অপরদিকে টলেমি, প্লিনির বিবরণের উপর নির্ভর করে বলা যায়, চট্টগ্রামের ইতিহাস দুই হাজার বছরের পুরনো। আবুল মনসুর আহমেদ তার বাংলাদেশ কালচার গ্রন্থে খ্রিস্টপূর্ব ২ শতকে চট্টগ্রামের অস্তিত্বের কথা বলেছেন। আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের মতে, ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজরা পোর্টো পিকানো (ছোট বন্দর), পোর্টো গ্রান্ডে (বড় বন্দর) হিসেবে খ্যাত হয়েছে।
বাঙালির হাইকোর্ট : ‘বাঙালকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছ’ এরকম একটা প্রবাদ প্রচলন রয়েছে। ৭১ এর পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান–পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিক বৈষম্যের পরিসংখ্যানমূলক একটি পোস্টার সারা পূর্ব পাকিস্তানে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। ৯০ এর দশকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘গাভীর মুখ চট্টগ্রামে, দুধের ওলান ঢাকায়’ এরকম একটা পোস্টারিং করেছিলেন। চট্টগ্রাম চেম্বার সচিবালয়ে আমি ৩০ বছর সার্ভিস করেছি। ইলেকশন আসলে, সংঘবিধি সংশোধন করতে হলে মরহুম এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন (যুক্তফ্রন্টের সংসদ সদস্য), শামসুল হুদা, অ্যাটর্নি আবু হেনা, আবু সালেহ, ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন আহমদ, মীর্জা শামসুদ্দিন, এডভোকেট আবুল কাশেম, এঁদের কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি। অন্যদিকে ঢাকা হাইকোর্টে এক্সপেনসিভ ডিল করা হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আমীরুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, আজমল হোসেন কিউসি, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ, আবদুল মতিন খসরু, তানজীবুল আলম, হাটাজারীর ব্যারিস্টার মেজবাহ, এঁদের সাথেও আমার কাজ করতে হয়েছে। ২০১৪ এর পরে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং এন্ড রিসাইক্লিং এসোসিয়েশনে কাজ করার সময় পর্যবেক্ষণ করেছি BELA, সংঘবিধি ও বিভিন্ন মামলা ফেইস করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সম্প্রতি এক আইনজীবী ও সাংবাদিক মতবিনিময় সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট অতীতে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডদের সমস্যার সমাধান বিষয়ক ব্যাপক খরচের কথা উল্লেখ করেন। বিজিএমইএর ডাইরেক্টর সাইফুল্লাহ কায়সার তাঁর একশ কোটি টাকা ক্ষতির কথা স্বীকার করেন।
২০০৩ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে তৎকালীন মুখ্য সচিব ডক্টর সাদাত হুসাইন একটি প্রজ্ঞাপন স্বাক্ষর করেন তবে সেখানে একটি ক্লজে বলা হয় ‘তবে চট্টগ্রামের লোককে মেট্রোপলিটন মানসিকতা অর্জন করতে হবে।’ এটি আমাদের অপমানজনক ছিল।
চট্টগ্রামবাসী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের এখন প্রাণের দাবি চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ। চট্টগ্রামবাসীর এই প্রাণের যৌক্তিক দাবির সাথে ‘হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম’ ১২জুলাই ২০২৫ এ একাত্মতা ঘোষণা করছে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এবং হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এএসএম বদরুল আনোয়ার।
সূত্রমতে, বর্তমানে এই দেশের বিচারাধীন মামলা প্রায় ৬০ লক্ষের অধিক। তন্মধ্যে হাইকোর্টে বিচারাধীন প্রায় ৬ লক্ষের অধিক। হাইকোর্টের কেবলমাত্র স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় চট্টগ্রামের বিচার প্রার্থী জনগণ সঠিক ও যথাযথ ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত অতিরিক্ত খরচ, প্রতারক (দালাল) দ্বারা লক্ষ লক্ষ টাকা হারানো, সারাদেশের মামলায় একমাত্র হাইকোর্ট ভারাক্রান্ত হওয়ায় মামলায় দীর্ঘসূত্রতা হয়। হাইকোর্ট ঢাকায় থাকায় দেশের জনগণ ছিল ৫ কোটি আর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটির অধিক। সুতরাং, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ যুগোপযোগী যৌক্তিক দাবি। হাইকোর্টে কেবল শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর সংক্রান্তে ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। যাতে সরকারের প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা শুল্ক, রাজস্ব ও ভ্যাট মামলা জটে আটকে আছে। বিচারাধীন উক্ত মামলাগুলোর মধ্যে ৭০% মামলা চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম বাণিজ্য সংক্রান্ত।
কেবল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে বর্তমানে প্রায় ৬০০০ সদস্য তন্মধ্যে প্রায় ২ হাজার হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অনুমতিপ্রাপ্ত। এই চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতিসহ এই বিভাগের অধীনে সংশ্লিষ্ট জেলার আইনজীবী সমিতিতে অনেক তরুণ মেধাবী আইনজীবী আছেন। হাইকোর্ট একটিমাত্র বেঞ্চ ঢাকায় স্থাপিত হওয়ায় সেই তরুণ আইনজীবীগণের মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আর দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আইনগত যৌক্তিকতা : বাংলাদেশ সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ হলো “রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী অফিস থাকিবে তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে–সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থান সমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থান সমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে”। প্রস্তাবনার ৩য় খণ্ডে বর্ণিত আছে, “আমরা আরো অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা–যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দেখা স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।” রাষ্ট্রের মূলনীতির ১৯(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, “সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে”। মৌলিক অধিকারের ২৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী”। ৩১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত, “আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। ৪৪ অনুচ্ছেদে হাইকোর্টকে মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন ও সংবিধানের রক্ষাকবজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ও বাংলাদেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর ও বাণিজ্য বাজার চট্টগ্রামে অবস্থিত। কিন্তু বন্দর সংশ্লিষ্ট এডমিরালটি আইন সংক্রান্তে ও কোম্পানি আইন সংক্রান্তে এখতিয়ার সম্বলিত হচ্ছে একমাত্র হাইকোর্ট। বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেই রাষ্ট্রের মূল বন্দর যে শহরে অবস্থিত সেই শহরের মধ্যেই এডমিরালটি ও কোম্পানি আইন এখতিয়ার সম্বলিত সংশ্লিষ্ট আদালত বা হাইকোর্ট স্থাপিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ চীনের সাংহাই, দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান, ভারতের মুম্বাই, নেদারল্যান্ডের রটারডাম, জার্মানির হামবুর্গ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট হাউলেও উল্লেখযোগ্য। বিধায় এডমিরালটি ও কোম্পানী আইন এখতিয়ার সম্বলিত সার্কিট হাইকোর্ট বেঞ্চ কিংবা আদালত চট্টগ্রামে স্থাপিত হওয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তা সর্বদা উপেক্ষিত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ থাকলেও আন্দামান নিকোবর ও জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়। সারাদেশে ২৪টি সার্কিট স্থায়ী বেঞ্চের সাথে ৬টি সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত আছে। পাকিস্তানে হাইকোর্টের ৫টি স্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। মূল বেঞ্চ ইসলামাবাদে, অপর ৪টি বেঞ্চ লাহোর, করাচি, পেশোয়ার ও কুট্টাতে স্থাপিত হয়। লাহোর হাইকোর্টে ৩টি সার্কিট বেঞ্চ, করাচিতে হাইকোর্টের ৩টি বেঞ্চ, পেশোয়ারে ৪টি বেঞ্চ এবং কুঠাতে ৪টি বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মূল বেঞ্চের পাশাপাশি ৬টি সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও ৬০০ জনের অধিক সার্কিট বিচারক আছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে Specialise, Sub Division of High Court, Country Court Ges Crown Cour: এ বিচার কার্য পরিচালনা করেন। অস্ট্রেলিয়ার মোট জনগণ ২.৫০ কোটি তথাপি অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বেঞ্চের পাশাপাশি ২টি করে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে নিউজিল্যান্ডে রয়েছে ১টি। শুধু হাইকোর্টের বেলায় নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে।
গত শতাব্দীর শেষ দিকে মা ও শিশু হাসপাতাল ভবনে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ও উপজেলা আদালত স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তী সরকার তা বাতিল করে দেন। অনেকে বলছেন, হাইকোর্টের জন্য স্মার্ট অবকাঠামো স্থাপন, বিচারপতিদের বাসভবন ও নিরাপত্তা প্রদান, ঢাকা থেকে বিজ্ঞ লইয়ারদের আনার জন্য অনেক টাকা খরচ হবে। তাছাড়া একধরনের মুৎসুদ্দীর শ্রেণী তৈরি হবে যা হাইকোর্ট স্থাপনে মূল লক্ষ্য বিনষ্ট হবে।
বিকেন্দ্রীকরণ : ১৯৮০সালে জেনারেল জিয়া বেপজা এ্যাক্ট ১৯৮০ (ী) দেশ অনুযায়ী বেপজার হেড কোয়ার্টার করেছিলেন। আগ্রাবাদস্থ ছোট অফিসে মাহমুদুল হক, ডিজিএম মাহবুব রহমানের অফিস শুরু হয়। এরশাদ আমলে কি–হাকসাং এর ইয়াংওয়ানসহ অনেকগুলো দেশ ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করে। পরে বেপজা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এএএম জিয়া হোসেনকে রেখে গোটা বেপজা ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। অনুরূপভাবে বাংলাদেশ টি বোর্ড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বিপিসি, বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র, কর্ণফুলী গ্যাস বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। বিএসটিআইতে এখনও পর্যন্ত ল্যাব স্থাপন না করায় সকল পরীক্ষা ঢাকা থেকেই টেস্টিং করতে হয়। তাছাড়া কৃষি পণ্য আমদানির কোআরান্টাইন সার্টিফিকেটও ঢাকা থেকে আনতে হয়। শুধুমাত্র চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ওজন স্কেল স্থাপন করা হয়েছে। অথচ অন্য বিভাগে তা নেই। বিকেন্দ্রীকরণকৃত সংস্থা সমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাফহার্টেড, ঢাকায় থাকেন। শোনা যায় স্ক্যানিং সিগনিচার দিয়ে কাজ চলে। এগুলোর কার্যকরভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করা হোক। এদিকে রূপার খনি খ্যাত শিপ ব্রেকিং ও রিসাইক্লিং এর ১২৫টি ইয়ার্ড ছিল। বর্তমানে তা ২৫টি দেশে দাঁড়িয়েছে। তারমধ্যে মাত্র ৯টা গ্রীন ফ্যাক্টরি আছে। হংকং কনভেনশন অনুযায়ী শুধুমাত্র এই ৯টি কার্যক্রম চালাতে পারবে। গত সরকার বিকল্প ইয়ার্ড স্থাপন করতে চেয়েছিল। এই সেক্টর প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামে ১৬৩টি চা বাগানে উৎপাদিত ৬০ মিলিয়ন কেজি চা পাতা চট্টগ্রাম থেকে নিলাম হতো। কিন্তু শ্রীমঙ্গলে আলাদা একটা অকশান খোলা চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ।
অথচ এর বিপরীতে কাস্টমসের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দু’জন সদস্যকে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রাম বসা, চট্টগ্রাম বন্দর বোর্ডে প্রাইভেট সেক্টর থেকে দুইজন সদস্য অন্তর্ভুক্তিকরণ সহ চট্টগ্রামের টোটাল সমস্যা সমূহ সমাধানের জন্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করা হয়েছে। শুরু করেছিলাম হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন নিয়ে। উপসংহারে বলি, সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রামে হাইকোর্ট স্থাপনের জন্য মানববন্ধন, গোলটেবিল আলোচনা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজকে বার কাউন্সিল মতবিনিময় সভা ডেকেছেন। আমরা উক্ত সমস্যা সমাধানে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে সবিনয়ে আবেদন জানাচ্ছি।
লেখক: কবি, নাট্যকার, উন্নয়ন গবেষক,
সাবেক সচিব, সিসিসিএনআই।