দেশের প্রথম মনোরেল চালু হতে যাচ্ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। যানজট নিরসনে নগরে মনোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চসিকের প্রস্তাবনায় জার্মান ও মিশরের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি ওরাসকোম কোম্পানি এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ মনোরেল নির্মাণে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
নগরীর মনোরেল নির্মাণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ বোরবার চসিকের সাথে ওরাসকোম গ্রুপ ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এতে সিটি মেয়র, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সমঝোতা স্মারকের পর ওরাসকোম কোম্পানি এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে নগরীতে। সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, মনোরেল হলো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন রেল ব্যবস্থা। মনোরেলের ক্ষেত্রে মেট্রোরেলের চেয়ে ৪০ শতাংশ অর্থের সাশ্রয় হবে। এর জন্য ব্যাপক জায়গার প্রয়োজন হয় না এবং স্থাপনার মধ্যেও লাইনটি চালু করা যায়। মনোরেল এক চাকার ট্রেন। এক চাকার উপর চলে। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে মনোরেল স্থাপন করে চালু করা সম্ভব।
চট্টগ্রামে মনোরেলের ব্যাপারে জার্মান ও মিশরের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি ওরাসকোম এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সাথে সমন্বয় করেন গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামে মনোরেল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে বিদেশি এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে ধরলে তারা নিজস্ব অর্থায়নে নগরীতে মনোরেল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় যানজট নিরসন ও বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে মনোরেল নির্মাণের ব্যাপারে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের আগ্রহে আজ এই প্রকল্পের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে।
নগরীর সড়কগুলোতে সারা বছর যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে বন্দর এলাকা ও এর আশপাশে যানজটের কারণে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। চট্টগ্রামের পূর্ব অংশ কালুরঘাটের দিকেও একই অবস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হলেও তা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায়। তবে মেট্রোরেল নয়, এবার নগরবাসীর প্রতিদিনের চলাফেরায় স্বস্তি ফেরাতে মনোরেল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে সিটি কর্পোরেশন। মনোরেলের মাধ্যমে নগরীতে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার নবদিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে জার্মান ও মিশনের জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি ওরাসকোম এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ।
এ ব্যাপারে গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ওরাসকোম জার্মান ও মিশরের বৃহৎ একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি এবং আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপও বড় প্রতিষ্ঠান। এই দুই কোম্পানি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন উচ্চগতির রেল প্রকল্পে কাজ করেছে। চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় মনোরেল নির্মাণের ব্যাপারে আমি বিভিন্ন সময়ে তাদের সাথে আলাপ করার পর তারা নগরীতে নিজস্ব অর্থায়নে মনোরেল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। সিটি মেয়রও নগরীতে মনোরেল নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়ায় উভয়ের আলাপ–আলোচনার পর আজ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে ওরাসকোম গ্রুপ ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এরপর তারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে। তারা পুরো প্রকল্পে অর্থায়ন করবে এবং প্রকল্পটির বাস্তবায়নও তারা করবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে মনোরেল নির্মাণ হলে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। যানজটও পুরোপরি নিরসন হবে। মনোরেল নির্মাণে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাস্তবায়নে সময়ও কম লাগে। মনোরেল এক চাকার উপর চলে। নগরীর বিদ্যমান সড়কের এক পাশে মনোরেলের একটি ট্র্যাক (লাইন) বসালেই হয়ে যায়।
ওরাসকোম কনস্ট্রাকশন : ওরাসকোম কনস্ট্রাকশন মিশরের একটি বৃহৎ নির্মাণ কোম্পানি, যারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। তারা জার্মান সিমেন্স মোবাইলিটির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে মিশরের প্রথম উচ্চগতির রেল প্রকল্পে কাজ করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা ৬৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন নির্মাণ করেছে।
ওরাসকোম কনস্ট্রাকশন পিএলসি (ওসি) হচ্ছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোকিউরমেন্ট এবং কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান কার্যালয় মিশরের কায়রো শহরে। এটি মিশরের প্রথম বহুজাতিক কর্পোরেশন হিসেবে পরিচিত। ওরাসকোম কনস্ট্রাকশন বর্তমানে ২৫টির বেশি দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
জানা গেছে, এর আগে ২০২১ সালের ৮ জুন নগরীতে মনোরেল চালু করতে চসিককে প্রস্তাব দিয়েছিল চায়না প্রতিষ্ঠান উইটেক। প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধিদল ওইদিন টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে তৎকালীন মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ প্রস্তাব দেয়। একই বছরের ১৯ মে মনোরেল চালুর প্রস্তাব করেছিল চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান উইহায় ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো–অপারেটিভ কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি টিম।