চট্টগ্রামে সড়কের পরিমাণ কম, বড় অংশ দখলে

মানসম্পন্ন নগরে রাস্তা থাকে ২০ শতাংশ, এখানে আছে ৬-৭ শতাংশ ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও সুফল মিলছে না যানজটে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহায় নগরবাসী

হাসান আকবর | বুধবার , ১৬ জুলাই, ২০২৫ at ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীতে সড়কের পরিমাণ ৮শ কিলোমিটারের মতো। পাকা, আধা পাকা এবং কাঁচা মিলে এই সড়কের পরিমাণ শহরের ৬ থেকে ৭ শতাংশ। অথচ মানসম্পন্ন এবং বাসযোগ্য একটি শহরে রাস্তার পরিমাণ হওয়ার কথা ২০ শতাংশের বেশি। তুলনামূলক বিচারে নগরীর সামান্য এই রাস্তার বড় একটি অংশ রয়েছে অবৈধ দখলে। নানা ধরনের উন্নয়ন কাজের কাটাকুটি হয় সড়কের উপরে। অবৈধ হকার, দোকানপাট, রিকশা টেক্সি স্ট্যান্ড, বাসট্রাক কিংবা প্রাইভেট কারের অবৈধ পার্কিং, গুরুত্বপূর্ণ সড়কজুড়ে অবৈধ বাস স্টেশনের কারণে নগরজীবনে রাস্তার সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নানা ব্যবসার ফলে নগরজুড়ে সৃষ্টি করছে ভয়াবহ যানজট। ট্রাফিক পুলিশ ম্যানেজ হয়ে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তুলছে বলেও অভিযোগ আছে। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা ডেডিকেটেড রাস্তা নির্মাণ করেও সুফল মিলছে না। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে ৪শ কিলোমিটারের মতো পিচ করা রাস্তাসহ প্রায় ৮শ কিলোমিটারের মতো সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে কার্পেটিং করা রাস্তার সংখ্যা ৫১৭টি, ব্রিক সলিং করা রাস্তার সংখ্যা ৬৭৮টি এবং কাঁচা রাস্তার সংখ্যা ৫৯৬টি। অলিগলি, রাজপথসহ সব মিলিয়ে শহরটিতে রাস্তার পরিমাণ ৬ থেকে ৭ শতাংশ। নগরীতে বর্তমানে ৭০ লাখের বেশি মানুষ এবং প্রায় দুই লাখ যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে জিপ ও মোটর কার হচ্ছে প্রায় চল্লিশ হাজার, ট্রাক ও পিকআপ প্রায় বিশ হাজার, মিনিবাস প্রায় আট হাজার, বাস প্রায় তিন হাজার। এছাড়া সিএনজি টেক্সি, মোটরসাইকেল মিলে যানবাহনের সংখ্যা দুই লাখ ছুঁইছুঁই। এর বাইরে নগরীর অলিগলি, রাজপথ জুড়ে দেড় লাখের মতো রিকশা চলাচল করছে। রাস্তা জুড়ে নানা গতির নানা রকমের যানবাহনের বিশাল চাপ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি বাসযোগ্য এবং বিশ্বমানের শহরের গতিশীলতার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে রাস্তা। উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে রাস্তার পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি থাকে। নিউ ইয়র্কে রাস্তার পরিমাণ ৩০ শতাংশ, টোকিওতে ২০ শতাংশ, লন্ডনে ২২ শতাংশ, বার্সেলোনায় ২৫ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৬ শতাংশ ও প্যারিসে ২৫ শতাংশ। অথচ চট্টগ্রাম শহরে রাস্তার পরিমাণ ৬৭ শতাংশ।

এত স্বল্প পরিমাণের রাস্তার একটি বড় অংশ আবার বছরজুড়ে দখলে থাকে। নগরীর এমন কোনো রাস্তা নেই যার কোনো না কোনো পয়েন্টে দখল বেদখল চলছে। ফুটপাতে হকার, রাস্তার উপর অবৈধ পার্কিং, স্টেশন রোড এবং গরিবুল্লাহ শাহ (.) এলাকায় অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, মোড়ে মোড়ে অবৈধ সিএনজি টেক্সি স্ট্যান্ড, রিকশা স্ট্যান্ড, রাস্তার উপর গাড়ি রেখে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা হয় শেখ মুজিব রোডে, আগ্রাবাদের রাস্তার বড় অংশ চলে যায় হকারদের দখলে। জিইসি মোড়, জামালখান মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, লালদিঘি পাড়, চকবাজার, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, দুই নম্বর গেটসহ নগরীর এমন কোনো মোড় নেই যেখানে কোনো না কোনোভাবে দখলদারিত্ব চলছে না। ফুটপাতসহ রাস্তার একটি বড় অংশে যান চলাচলের সুযোগ না থাকায় যানজট তীব্র হয়। নগরীর বিভিন্ন সড়কে উন্নয়নমূলক কিছু কার্যক্রম চলছে। যেগুলো নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সড়কের শৃক্সখলা রক্ষায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব থাকলেও তা চোখে পড়ে না। গাড়ি আটক করে মামলার হুমকি দিয়ে নগদ আদায়ের প্রবণতা বেড়েছে বলে অভিযোগ আছে।

সড়কজুড়ে জটলা থাকার কারণে নগরীতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা ফ্লাইওভার করা হলেও সুফল মিলছে না। এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা ডেডিকেটেড রাস্তা ধরে দ্রুত এসে ফ্লাইওভার থেকে নেমে আর নড়াচড়া করা যায় না। এতে করে কিছু পথ দ্রুত পাড়ি দেওয়া সম্ভব হলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে ঠিকই দেরি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে মোট ১৩৫টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে চৌরাস্তার মোড় রয়েছে ৯৭টি এবং তিন রাস্তার মোড় রয়েছে ৩৮টি। এই ১৩৫টি পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করেন। সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকে। তারপরও নগরীর প্রধানঅপ্রধান সব সড়কে যানজট থাকে। একসময় চাক্তাইখাতুনগঞ্জের যানজট মানুষের নিকট আতংকের বিষয় ছিল। এখন পুরো নগরীতেই একই অবস্থা।

এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো সঠিক নয়। পুলিশ চেষ্টা করছে। প্রচুর মানুষ, প্রচুর গাড়ি। এগুলো সামলে নগরীকে ঠিক রাখার জন্য পুলিশের চেষ্টার কমতি নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ফজলে করিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও একটি স্কুল সরকারি হলো