চট্টগ্রামে সাড়ে ১৩ কোটি টাকার শাক-সবজি নষ্ট

কপাল পুড়ল দেড় হাজার কৃষকের ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাব

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ এর প্রভাবে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার আগাম শীতকালীন শাকসবজি নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৮৪ জন কৃষকের। ২০৮ দশমিক ৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ৩ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন শাকসবজি নষ্ট হয় ঘূর্ণিঝড়টির কারণে। প্রতি কেজি সবজির মূল্য ৩৫ টাকা হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ আঘাত হানার শঙ্কায় চট্টগ্রামে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলে আবহাওয়া অফিস। তবে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রামে সরাসরি আঘাত হানেনি। গত ১৭ নভেম্বর বেলা ১টার দিকে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়টি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে মোংলাপায়রা উপকূল পেরিয়ে পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে এর প্রভাবে কয়েকদিন বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। এতে মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম, টমেটো, ক্ষীরা ও লাউসহ বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতকালীন শাকসবজি নষ্ট হয়। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান আজাদীকে বলেন, মিধিলি এর প্রভাবে চট্টগ্রামে আমন ধান এর খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। শীতকালীন আগাম শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, রবিশস্য এবং সামনে বোরো মৌসুম উপলক্ষে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে। মিধিলির জন্য যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করতে উপজেলা কৃষি অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছি।

কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নগর ও জেলায় ২১ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষ হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৬ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয় মিধিলার প্রভাবে। আক্রান্ত জমির মধ্যে ২৭ দশমিক ৫ হেক্টর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ২ হাজার ৪৭৮ দশমিক ৫ হেক্টর আংশিক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে আংশিক ক্ষতি হওয়া ১৮০ দশমিক ৮ হেক্টর জমির শাকসবজি সম্পূর্ণ ক্ষতিতে রূপান্তর হয়। সবমিলিয়ে ২০৮ দশমিক ৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত শাকসবজি নষ্ট হয়।

নষ্ট হওয়া সবজির মধ্যে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ১ হাজার ৬৯ হেক্টরের মধ্যে ৫০ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ৩ হাজার ২৭৬ হেক্টরের মধ্যে ৮০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩ হাজার ১৩২ হেক্টরের মধ্যে ৪৫০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ২৭০ হেক্টরের মধ্যে ৬০ হেক্টর, রাউজানে ৭৫০ হেক্টরের মধ্যে ২৫০ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৭১৮ হেক্টরের মধ্যে ৬৫ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ১৯০ হেক্টরের মধ্যে ২৫ হেক্টর, পটিয়ায় ৬৯৮ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২৩৩ হেক্টরের মধ্যে ৭০ হেক্টর, আনোয়ারায় ৬৫০ হেক্টরের মধ্যে ৪০ হেক্টর, চন্দনাইশে ১ হাজার ৩৯০ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ৮০০ হেক্টরের মধ্যে ৩ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ১ হাজার ৬৫ হেক্টরের মধ্যে ১ হেক্টর, বাঁশখালীতে ২ হাজার ৮৬০ হেক্টরের মধ্যে ২৮০ হেক্টর ও সন্দ্বীপে ৩ হাজার ৫৪০ হেক্টরের মধ্যে ১ হাজার ৮১ হেক্টর মিধিলার প্রভাবে আক্রান্ত হয়। এছাড়া নগরের পাঁচলাইশে ১৫০ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর, ডবলমুরিংয়ে ৫০ হেক্টরের মধ্যে ১৮ হেক্টর ও পতেঙ্গায় ২৩৪ হেক্টরের মধ্যে ১৪ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়।

এর মধ্যে সীতাকুণ্ডে ১৩ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ২৫ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৩ হেক্টর, রাউজানে ৫০ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৬ দশমিক ৫ হেক্টর, পটিয়ায় শূন্য দশমিক ৫ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ৫ দশমিক ৩০ হেক্টর, আনোয়ারায় ৮ হেক্টর, চন্দনাইশে ৪ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ২ হেক্টর, সাতকানিয়ায় শূন্য দশমিক ৫ হেক্টর এবং সন্দ্বীপের ৮০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এছাড়া নগরের পাঁচলাইশে শূন্য দশমিক ৫ হেক্টর ও ডবলমুরিংয়ে ১০ হেক্টর জমির ফসর নষ্ট হয়। মীরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী উপজেলা ও নগরের পতেঙ্গা থানায় সাকসবজি চাষ হয়েছে এমন ফসলি জমি আক্রান্ত হলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছিনতাই চেষ্টার পর নালায় লাফ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা