একটি দেশের সাক্ষরতা এবং উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। বলা হয়, নিরক্ষরতা উন্নয়নের অন্তরায়। টেকসই সমাজ গঠনের জন্য যে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন তা সাক্ষরতার মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো সাক্ষরতা অর্জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় ভিন্নতা রয়েছে। তবে ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো থেকে সাক্ষরতার একটা সর্বজনীন একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস–২০২৪। বিশ্বের সকল দেশের জন্য ইউনেস্কো নির্ধারিত এবারের আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রমোটিং মাল্টিলিঙ্গুয়াল এডুকেশন: লিটারেসি ফর মিউচুয়াল আন্ডারস্টান্ডিং এন্ড সি’, অর্থাৎ ‘বহু ভাষায় শিক্ষার প্রসার: পারস্পরিক সমঝোতা ও শান্তির জন্য সাক্ষরতা’।
১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে এদিনে সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে।
সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা (২০২২) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় সাক্ষরতার হার ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যা পুরো বিভাগের মধ্যে এগিয়ে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলায় সাক্ষরতার হার ৮০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যা ২০১১ সাল থেকে ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরতার হার এখন ৮২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার ৭৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা তথ্যে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে গ্রামের চেয়ে এগিয়ে আছে শহরাঞ্চল। শহরাঞ্চলে পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮২ শতাংশ ৪০ শতাংশ, নারী ৭৯ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ৫১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ১১ বছর আগে পুরুষ ছিল ৬৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও নারী সাক্ষরতার হার ছিল ৬১ দশমিক ২১ শতাংশ। পুরুষের সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নারী সাক্ষরতার হার বেড়েছে ১৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। একইভাবে চট্টগ্রাম জেলার আওয়াধীন গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। এরমধ্যে পুরুষ ৭৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।
জেলাগুলোর মধ্যে সাক্ষরতার হারে এগিয়ে আছে পিরোজপুর। এই জেলায় সাক্ষরতার হার ৮৫ এর বেশি। আর সবচেয়ে কম সাক্ষরতা জামালপুরে (৬১ দশমিক ৫৩)। বিভাগের মধ্যে এগিয়ে ঢাকা (৮৫ শতাংশ)।
জানা যায় আগে শুধু কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো। পরবর্তীতে প্রায় প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে এবং ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো হলো, ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে, দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ হিসাব–নিকাশ করতে পারবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে।
নানা কারণে সাক্ষরতার হার বেড়েছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। এর মধ্যে রয়েছে বাবা–মায়ের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, ছেলে–মেয়ে ভেদাভেদ হ্রাস, নারী অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মেয়েদের কর্মমুখী চিন্তাধারা। সাক্ষরতা মানব উন্নয়নের অন্যতম একটি সূচক বলে মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, সাক্ষরতা বাড়ানোর জন্য সরকারি উদ্যোগের চেয়ে বেসরকারি উদ্যোগ কাজে দিয়েছে। সাক্ষরতা আরও বাড়ানোর সবচেয়ে বেশি দরকার জনসচেতনতা। জনসচেতনতা যত বাড়বে তত সাক্ষরতার হার বাড়বে।