চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৮ এপ্রিল এবং গত বছরের ২ জুলাই চট্টগ্রাম জেলায় করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ৬ জন করে মারা গিয়েছিলেন। মৃতদের মধ্যে ৬ জন নগরীর এবং ৩ জন বিভিন্ন উপজেলার। এ নিয়ে মোট ৪২৩ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে মহানগরীর ৩০৯ জন, জেলার ১১৪ জন। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ২২৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষাকৃত নমুনায় ১২.২১ শতাংশের পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে এদিন। গত শনিবার চট্টগ্রামে সর্বাধিক ৫২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। নতুন শনাক্ত ২২৮ জনসহ চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৩১৯ জনে। এর মধ্যে মহানগরীর ৩৫ হাজার ৫৩১ জন ও জেলার ৮ হাজার ৭৮৮ জন বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৮৬৭টিসহ এ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৩১৯ জনের। হিসেবে চট্টগ্রামে শনাক্তের গড় হার ১২ শতাংশ। নতুন ৬৬ জনসহ এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৬৩ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। হিসেবে আক্রান্তদের ৭৮.৪৩ শতাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এদিকে হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ২৫ জন ও ছাড়পত্র নেন ১০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১ হাজার ৩২৯ জন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজাদীকে গতকাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ৭ জন, রাউজান ও সীতাকুণ্ডে ৩ জন করে, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, সন্দ্বীপ ও পটিয়ায় ২ জন করে এবং সাতকানিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালীতে ১ জন করে রয়েছেন।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে ৮০৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ৪ জনসহ ৫২ জন জীবাণুবাহক পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ৪৩৪ জনের নমুনার মধ্যে ১০ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হন। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৫৪টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ২টিসহ ৫৩টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়। বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আরটিআরএলে পরীক্ষিত ১২টি নমুনার ৭টির রেজাল্ট পজিটিভ আসে। এসব নমুনার ৭ বাহকই শহরের বাসিন্দা।
বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাব শেভরণে ৪০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে গ্রামের ১৫টিসহ ৫৯টি এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৫২টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ৩টিসহ ২৭টিতে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এদিন চট্টগ্রামের কোনো নমুনা কঙবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়নি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণে বিআইটিআইডিতে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, চমেকে ২ দশমিক ৩০, সিভাসুতে ৩৪ দশমিক ৪১, আরটিআরএলে ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শেভরণে ১৯ দশমিক ৪৬ এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৫১ দশমিক ৯২ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, এটাই চট্টগ্রামে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এখনকার ভাইরাসটি একটু বেশি মারাত্মক। খুব দ্রুত রোগীকে কাবু করে ফেলে। আগে থেকে কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে সেটাকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। বলা হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসটির মতোই আগ্রাসী জীবাণুতে এখানে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ছিলেন সিভিল সার্জন। গতকাল তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসেন।