চট্টগ্রামে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বকেয়া বিলের পরিমাণ ১২৪ কোটি টাকারও বেশি।
পিডিবির তথ্যমতে, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে। চসিকের কাছে পিডিবির বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৬১ কোটি টাকা।
মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক দপ্তর পিডিবির বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এসব বকেয়া পরিশোধ করতে না পারার কারণ হিসেবে ফান্ড না পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে ২৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এই বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। পিডিবির বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের তালিকায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ, রেলওয়ে, স্বাস্থ্য বিভাগীয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জনস্বাস্থ্য, ওয়াসা, বন বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খাদ্য অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে পিডিবির বকেয়া বিলের পরিমাণ ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার ১১৩ টাকা। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে পিডিবির বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের তালিকায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছেই পিডিবির বকেয়া ৬১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আমাদের পিডিবির বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ ১২৪ কোটি টাকার বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। অনেক সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানে মানবিক দিক বিবেচনায় বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৭১ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া ১১ কোটি টাকার বেশি। ডিফেন্সে বকেয়ার পরিমাণ ২১ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য বিভাগে বকেয়ার পরিমাণ ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের ব্যাপারে আমরা এসব প্রতিষ্ঠানে বারবার চিঠি দিয়ে তাগাদা দেওয়ার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ না করায় আমরা বাধ্য হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি।
প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে ঠিক মত বরাদ্দ পাওয়া যায় না। এজন্য ঠিক সময়ে তারা বিল পরিশোধ করতে পারে না বলে আমাদেরকে জানায়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রত্যেক সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা উচিত।
পিডিবির তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে আরো যেসব সরকারি দপ্তরে বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে তার মধ্যে রেলওয়ের কাছে বকেয়া পাওনা ৩ কোটি ৩৫ লাখ ১০ টাকা, পুলিশের কাছে ৮ কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ২১ টাকা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার ২৪, গণপূর্ত বিভাগে এক কোটি ৫০ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সড়ক ও জনপথ বিভাগে ৬৮ লাখ ৪৭ হাজার ২২৯, জনস্বাস্থ্যে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৬৮, পৌরসভায় ৩ কোটি ৩১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৭, ওয়াসায় ১৯ লাখ ৪১ হাজার ২৬৫, বন বিভাগে ১০ লাখ ৪ হাজার ৪০৭, শিক্ষা বিভাগে ৭০ লাখ ৩০ হাজার ১২২, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৭০ হাজার ৩২৫ ও খাদ্য অধিদফতরে ৯৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৭ টাকা বকেয়া রয়েছে।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, নতুন বিদ্যুৎ আইনে এখন প্রতি মাসের বিল প্রতি মাসেই পরিশোধ করতে হবে। এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ আইনে পিডিবির প্রকৌশলীদের অভিযানে সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ জরিমানা আদায়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলে জানান পিডিবি চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম সাব স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী কেনোয়ার হোসেন। তিনি আজাদীকে বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে আমরা নিয়মিত অভিযান করছি। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি। জরিমানা আদায় করছি। বিদ্যুৎ আমাদের মূল্যবান সম্পদ, এর ব্যবহারে যেমন সচেতন হতে হবে–তেমনি বিল পরিশোধেও সচেতন হতে হবে। এখন বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার সুযোগ নেই। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।