চট্টগ্রামে সংক্রমণ হারের প্রকৃত চিত্র যে রকম

মার্চের প্রথম ১০ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ মার্চ, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ১ মার্চ ১ হাজার ৮২৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সেই হিসেবে ওইদিন করোনা শনাক্তের হার দেখানো হয় ৫.৯৫ শতাংশ। এটি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য। তবে ওইদিন পরীক্ষাকৃত ১৮২৯টি নমুনার মধ্যে ৯৬৭টি ছিল বিদেশগামী যাত্রীর। বিদেশগামী ৯৬৭ জনের মাঝে ১০ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। বিদেশগামীদের হিসাব বাদ দিলে ওইদিন সাধারণের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৬২টি। শরীরে করোনার বিভিন্ন উপসর্গ বা লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ার পরই তারা মূলত নমুনা পরীক্ষা করান। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৮৬২টি সাধারণ নমুনায় ৯৯ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায় ওইদিন। শতকরা হিসেবে যা ১১ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রদত্ত দৈনিক সংক্রমণের হারের তুলনায় প্রকৃত হার প্রায় দ্বিগুণ। ৩ মার্চ ১ হাজার ৪৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। সেই হিসেবে ওইদিন শনাক্তের হার দেখানো হয় ৬.৫৮ শতাংশ। তবে বিদেশগামীদের হিসাব আলাদা করলে ওইদিন সংক্রমণের হার ছিল ২৬ শতাংশের বেশি। ওইদিন পরীক্ষাকৃত ১ হাজার ৪৭২টি নমুনার মধ্যে ১ হাজার ১২৫টি ছিল বিদেশগামী যাত্রীর। এসব বিদেশগামীর মাঝে ৬ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। বিদেশগামীদের হিসাব বাদ দিলে ওইদিন সাধারণের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৪৭ জনের। যার মধ্যে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় ৯১ জনের। শতকরা হিসেবে ওইদিন সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ২৬ শতাংশের বেশি; যা সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রদত্ত সংক্রমণের হারের তুলনায় প্রায় ৫ গুণ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদেশগামীদের হিসাব আলাদা করলে কোনো কোনো দিন চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশেও পৌঁছেছে। কোনো কোনো দিন আরো বেশি।
উল্লেখ্য, কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা না গেলেও বিদেশ যাত্রায় করোনা নেগেটিভ সনদের বাধ্যবাধকতার কারণে নমুনা পরীক্ষা করাতে হয় বিদেশগামীদের; যার কারণে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষায় কেবল হাতেগোনা কয়েকজনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। অন্যদিকে, শরীরে কোনো না কোনো উপসর্গ দৃশ্যমান হওয়ার পরই করোনার নমুনা পরীক্ষা করান সাধারণরা। চিকিৎসকদের মতে, বিদেশগামীদের হিসাব আলাদা করে সাধারণের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ও তাদের মধ্য থেকে পজিটিভ শনাক্তের হারই সংক্রমণের প্রকৃত তথ্য জানান দেয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদেশগামীদের হিসাব আলাদা করলে মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনে চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণের গড় হার দাঁড়ায় ১৫ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ প্রতি একশ জনের নমুনা পরীক্ষায় অন্তত ১৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে চট্টগ্রামে। যদিও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রদত্ত তথ্যে একই সময়ে সংক্রমণের গড় হার ৬ শতাংশের সামান্য কম-বেশি। মূলত বিদেশগামীর সংখ্যা একই সাথে হিসাবে আনায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যে শনাক্তের গড় হার কম আসছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত মোট ১৬ হাজার ৮৬০টি নমুনা পরীক্ষা হয় চট্টগ্রামে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৮টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। গড় শনাক্তের হার ৬.২১ শতাংশ। এটি বিদেশগামীর সংখ্যাসহ হিসাবের তথ্য। এর মধ্যে বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা হয় ১০ হাজার ৬৩৭ জনের। এদের ৮৮ জনের করোনা ধরা পড়ে। হিসেবে বিদেশগামীদের করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশের কম (০.৮২ শতাংশ)।
বিদেশগামী যাত্রীদের এই হিসাব আলাদা করলে মার্চের প্রথম ১০ দিনে ৬ হাজার ২২৩টি সাধারণ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামে। এতে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে ৯৬০ জনের। হিসেবে সাধারণের পরীক্ষাকৃত নমুনায় শনাক্তের গড় হার ১৫.৪২ শতাংশ। কেবল মার্চের শুরুতে নয়, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেও পাওয়া গেছে একই চিত্র।
মানুষের অবহেলায় করোনা সংক্রমণের হার ফের বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি আজাদীকে বলেন, টিকা আসার পর মানুষের মাঝে করোনা নিয়ে উদাসীনতা ও গাফিলতি বেড়েছে। যার কারণে অধিকাংশের মুখে মাস্ক পরা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি কোনোটাই মানছেন না। এতে করে সংক্রমণ আবারো ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি পুনরায় খারাপের দিকে যেতে পারে।
বিদেশগামীর হিসাব আলাদা করলে শনাক্তের হার কিছুটা বেশি বলে স্বীকার করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বিদেশগামীসহ সব নমুনা পরীক্ষার হিসাব একই সাথে করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকীটনাশক সংগ্রহের পূর্বে চবির পরামর্শ নেবে চসিক
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরে স্টোর রেন্ট দ্বিগুণ করার সুফল মিলছে